খুলনা: সুন্দরবনকে রক্ষায় সরকারি-বেসরকারি সম্মিলিত সর্বোচ্চ উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বানের ভেতর দিয়ে পালিত হলো সুন্দরবন দিবস। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সুন্দরবনকে ভালোবাসার আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে সুন্দরবন সংলগ্ন জেলা-উপজেলাগুলোতে দিবসটি পালন করা হয়।
খুলনায় সুন্দরবন দিবসের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান ছিল তিন দিনব্যাপী। রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) শেষদিনের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় নগরীর জাতিসংঘ শিশুপার্কে।
সকালে খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আবদুস সামাদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর, খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসক শেখ হারুনুর রশীদ, খুলনার পুলিশ সুপার মোঃ হাবিবুর রহমান, পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন, ইউএসএইডের ওয়াইল্ড টিমের টাইগার অ্যাকটিভিটির চিফ অব পার্টি গ্রে এফ কলিন্স, ইউএসএইডের ক্রেল প্রকল্পের ডেপুটি চিফ অব পার্টি গিজ কেভিন কেম্প, জিআইজেডের সুন্দরবন ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের টিম লিডার ওয়েমার ইডিওই।
সুন্দরবন একাডেমির উপদেষ্টা ও রূপান্তরের নির্বাহী পরিচালক রফিকুল ইসলাম খোকনের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বন বিভাগ খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক জহির উদ্দিন আহমেদ। ধন্যবাদ জানান সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া সরকারি করোনেশন বালিকা বিদ্যালয়ের সাদিকা আফনিন ঋদ্ধি, দ্বিতীয় হওয়া সেন্ট জোসেফস হাইস্কুলের আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং তৃতীয় হওয়া খুলনা জিলা স্কুলের আলিফ আল জামানও বক্তৃতা করে। অনুষ্ঠানে ‘সুন্দরবন সংরক্ষণে আমার ভাবনা’ বিষয়ে বক্তৃতা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় হারম্যান মাইনর স্কুলের মোঃ সালমান সাদি প্রথম, একই স্কুলের সামিয়া তাসনিম অহনা দ্বিতীয় এবং খুলনা জিলা স্কুলের মাহির শারিয়ার বিন সাত্তার তৃতীয় স্থান লাভ করে। অংশগ্রহণকারী ২০টি বিদ্যালয়কেও অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা পুরস্কার প্রদান করা হয়।
বর্ণাঢ্য শোভযাত্রা, রূপান্তর থিয়েটারের পরিবেশনায় সুন্দরবনের পটগান, মুণ্ডা শিল্পীদের পরিবেশনায় গীতিনৃত্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। পরে বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। জাতীয় পর্যায়ে পরিবেশ পদক পাওয়া সুন্দরবনপ্রেমিক আলহাজ্ব লিয়াকত আলীর নামে এবারের দিবসটি উৎসর্গ করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা সুন্দরবনকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সুন্দরবনের টিকে থাকার ওপর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বেঁচে থাকা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, সমৃদ্ধি বহুলাংশে নির্ভরশীল। এ বনকে ভালোভাবে বাঁচিয়ে রাখতে সকলকে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
তিনটি প্রধান উদ্দেশ্য নিয়ে ২০০১ সাল থেকে প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস পালিত হচ্ছে। সেগুলো হচ্ছে- জাতীয় বন সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের গুরুত্ব ও ভূমিকা সর্ম্পকে সর্বমহলে ব্যাপক সচেতনতা এবং আগ্রহের সৃষ্টি করা, যাতে এটির সংরক্ষণের কাজ শক্তিশালী হয়। বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন সংরক্ষণে বনবিভাগ ও বেসরকারি উদ্যোগগুলোকে সহায়তা করা এবং সুন্দরবনের প্রতি নতুন প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীদের ভালোবাসা ও মমত্ববোধ তৈরি করা এবং তাদের চেতনায় সুন্দরবন ভাবনাকে উজ্জীবিত করা। তবে এই প্রধান তিন উদ্দেশ্যের বাইরেও সুনির্দিষ্টভাবে বেশ কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে এ দিবস পালনের নেপথ্যে। সুন্দরবন একাডেমি ও বন বিভাগের আয়োজনে এবং কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড, রিলিফ ইন্টারন্যাশনাল, ক্রেল, ট্রাইগার প্রজেক্ট, রূপান্তর এবং খুলনা প্রেসক্লাবসহ কয়েকটি জাতীয় আন্তর্জাতিক সংগঠনের সহায়তায় এবারের সুন্দরবন দিবসের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান বরাবরের মতোই খুলনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।
খুলনায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছাড়াও সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা এবং মোংলা, মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, কয়রা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা, শ্যামনগর, আশাশুনিসহ বিভিন্ন উপজেলায় স্থানীয় বনবিভাগ, প্রেসক্লাব এবং অন্যান্য বেসরকারি সংগঠনগুলোর উদ্যোগে সুন্দরবন দিবসের নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে র্যালি, আলোচনা সভা, সেমিনার, কর্মশালা, সংবাদ সম্মেলন ইত্যাদি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৬
এমআরএম/এএসআর