ঢাকা: শৃঙ্খলা, আচরণবিধি ভঙ্গ ও পেশাগত অসদাচরণের কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে প্রসিকিউশন।
রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ে।
বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকও চিঠি প্রাপ্তির বিষিয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি বলেও জানান তিনি।
এদিকে ট্রাইব্যুনালের এক সূত্রে পাওয়া গোলাম আরিফ টিপু স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি ভঙ্গ ও পেশাগত গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে তার (মোহাম্মদ আলী) বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ অতিব জরুরি। জনস্বার্থে এবং প্রসিকিউশনের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। ’
এর আগে গত ৪ ফেব্রুযারি চিঠি দিয়ে প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলীকে মামলা তদন্ত সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একইসঙ্গে বিচারাধীন মামলা পরিচালনার কাজে অংশগ্রহণ করা থেকেও বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
জনস্বার্থে এই আদেশ দেওয়া হয় বলে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলির কার্যালয়ের প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলীকে আলবদর শামসুল হক গং, শামসুল হোসেন তরফদার এবং অন্যান্য মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টতা থেকে প্রত্যাহার করা হলো। পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পরিচালনাধীন কোনো মামলা পরিচালনার কাজে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হলো। এ আদেশটি জনস্বার্থে দেওয়া হলো।
ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা যায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক ময়মনসিংহের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হান্নানের মামলায় অনৈতিক-অসদাচরণ আচরণ করায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় প্রসিকিউশন। এর আগেও মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে অপেশাদার আচরণের অভিযোগ উঠেছিল প্রসিকিউশন থেকে।
চিঠির বিষয়ে মঙ্গলবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) মোবাইল ফোনে মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, অতীতে এ ধরনের ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে। পেশাগত দিক দিয়ে আমাকে বারবারই বিব্রত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ চিঠি পেয়ে আমি বিব্রতবোধ করছি।
তবে কি কারণে তার বিরুদ্ধে এমন চিঠি ইস্যু করা হয়েছে সে বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর সঙ্গে কথা বলার পর সংবাদ মাধ্যমের সামনে মুখ খুলবেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
এর আগে ২০১৪ সালের মার্চে ও জুনে মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে অপেশাদার আচরণের অভিযোগ এনেছিলেন প্রসিকিউশন টিমেরই আরেক সদস্য তুরিন আফরোজ। মোহাম্মদ আলীও সে সময় তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন।
দুই প্রসিকিউটরের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের সে সময় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। তবে এক পর্যায়ে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নিরসনে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হককে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল।
সে সময় ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত চিফ প্রসিকিউটর হায়দাল আলীর কাছে করা লিখিত অভিযোগে তুরিন আফরোজ উল্লেখ করেছিলেন, ‘২০১৪ সালের ১১ জুন (বুধবার) বেলা সোয়া ২টায় ভারপ্রাপ্ত চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের পক্ষে সহকর্মী মোহাম্মদ আলী একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। যা প্রধান কৌঁসুলির অনুমতি ছাড়া করা হয়। ওই সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ আলী আমার সম্পর্কে যেসব অভিযোগ করেছেন তা সত্য নয়। ’
তুরিন আফরোজ লিখিত অভিযোগে আরও উল্লেখ করেছিলেন, ‘মোহাম্মদ আলী অনবরত আমার সম্মান নষ্টের জন্য অপেশাদারি আচরণ করছেন। আমার ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবন নিয়ে কুৎসা রটাচ্ছেন। ’
তুরিন আফরোজ লিখিত অভিযোগে মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও আরজি জানিয়েছিলেন ভারপ্রাপ্ত চিফ প্রসিকিউটর হায়দার আলীর কাছে।
দুই বছর আগে প্রসিকিউশন টিমের দুই সদস্যের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী দ্বন্দ্ব নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন বাংলানিউজকে।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৬
এমএইচপি/এএ