ঢাকা: অবশেষে দেশের এক কোটি ৩০ লাখ জ্যেষ্ঠ নাগরিক আলাদা ‘সিনিয়র সিটিজেন’ কার্ড বা পরিচয়পত্র পাচ্ছেন। জাতীয় পরিচয়পত্রের আদলেই প্রবীণদের স্বীকৃতি বা পরিচয়পত্র দেবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ডাটা শেয়ার করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এই পরিচয়পত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছে। দক্ষ জনবল নিয়োগ এবং নির্বাচন কমিশন থেকে ডাটা শেয়ারিংয়ের পর পরিচয়পত্র তৈরির কাজ শুরু করবে মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব চৌধুরী বাবুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, দক্ষ জনবল নিয়োগ এবং নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ডাটা শেয়ারিংয়ের পর শুরু হবে পরিচয়পত্র তৈরির কাজ।
২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর ৬০ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতির বিধান রেখে জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা-২০১৩ অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এরপর তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয় ২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি।
এ নীতিমালায় ষাটোর্ধ্ব প্রবীণ নাগরকিদের স্বীকৃতি হিসেবে পরিচয়পত্র দেওয়ার বিধান রাখা হয়। তবে দীর্ঘ দিনেও তা সম্ভব হয়নি নানা জটিলতায়।
২০১৫ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় জাতীয় পরিচয়পত্রটি পিংক কালারের (গোলাপি রঙের) করে তাতে মনোগ্রাম ও ‘সিনিয়র সিটিজেন’ লিখে সম্পন্ন করার প্রস্তাব দেয় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে। বিষয়টি নিয়ে বার বার তাগাদা দিলেও সম্মত হয়নি নির্বাচন কমিশন।
তবে এ বিষয়টির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত সারসংক্ষেপের পর ইসি থেকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে মৌখিকভাবে বিষয়টির সম্মতি দেয়। তার পরেও জনবল সংকটের কারণে আবারো বিষয়টি ঝুলে পড়ে।
এক পর্যায়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ইসি সচিবালয়ের আলোচনা ও চিঠি চালাচালির পর ডাটা শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পরিচয়পত্র করার সিদ্ধান্ত নেয়।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট উপসচিব সালমা সিদ্দিকা মাহতাব বাংলানিউজকে বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ই দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের ‘সিনিয়র সিটিজেন’ কার্ড বা পরিচয়পত্র দেবে। তবে এই পরিচয়পত্র দিতে হলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ডাটা শেয়ার করতে হবে। কারণ দেশের কারা প্রবীণ নাগরিক তার সমস্ত তথ্যই রয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে।
তিনি জানান, ডাটা শেয়ারিংয়ের জন্য ইসির সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের চুক্তি হবে। তখন আমরা ডাটা শেয়ার করতে পারবো।
অন্যদিকে সমাজ কল্যাণমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী ডাটা শেয়ারিং এবং তা যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য জনবল নিয়োগ করতে হবে। তারপর পরিচয়পত্র তৈরির ব্যবস্থা নিতে হবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে।
এ বিষয়ে উপসচিব সালমা সিদ্দিকা মাহতাব বলেন, ডাটা শেয়ারিং এবং তা নিয়ে কাজ করার জন্য জনবল নিয়োগের অনুমোদন পাওয়া গেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় লোকবলের অনুমোদন দিয়েছে। এখন জনবল নিয়োগ করা হবে। এরপর পরিচয়পত্র তৈরির কাজ শুরু হবে।
কবে নাগাদ এই পরিচয়পত্র তৈরি সম্পন্ন হবে তা জানা যাবে ডাটা শেয়ারিংয়ের পর।
জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা-২০১৩ অনুযায়ী দেশের ষাটোর্ধ্ব প্রবীণ নাগরিকদের রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘জ্যেষ্ঠ নাগরিক’ বা সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে। নীতিমালা বাস্তবায়নে সরকার পদক্ষেপ নেয় ২০১৩ সালেই। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ দেশের ষাটোর্ধ্ব প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ প্রবীণকে ‘সিনিয়র সিটিজেন’ ঘোষণা করেন।
নীতিমালা অনুযায়ী প্রবীণ এসব নাগরিকদের সমাজ্যে বৈষম্য ও নিপীড়নমুক্ত নিরাপদ জীবনযাপনের নিশ্চয়তা দেওয়ার কথা রয়েছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, সম্পদ, মর্যাদা, লিঙ্গ নির্বিশেষে মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রকে।
এছাড়া আলাদা এবং বিনামূল্যে ও স্বল্প মূল্যে স্বাস্থ্য সেবা, সব প্রকার যানবাহনে আসন সংরক্ষণ, বিশেষ ছাড়ে টিকেট প্রদান এবং আলাদা টিকিট কাউন্টার স্থাপন, প্রবীণদের জন্য দিবা-যত্নকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। এমনকি মৃত্যুর পরে দাফনের দায়িত্বও পালন করবে রাষ্ট্র।
অন্যদিকে তাদের সম্পদ রক্ষাসহ সঞ্চয় প্রকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ, উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা নেবে সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬
এসএমএ/এসএইচ