ঢাকা: বিশ্ব এগোচ্ছে একদিকে আর রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) হাঁটছে অন্যদিকে।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশ যখন মিনি বাস, কোস্টার বাদ দিয়ে বড় বাস ও আর্টিকুলেটেড বাস চালু করছে, সেখানে খোঁড়া অজুহাতে আর্টিকুলেটেড বাস কেনার সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোতেও এখন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ৩২ সিট ও তার চেয়ে ছোট কোনো বাসের চলাচল নেই।
দক্ষিণ এশিয়া ছাড়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও রাস্তায় ৫০ সিটের নিচে কোনো বাস চোখে পড়েনা। ইউরোপ-আমেরিকা তো আগেই ডাবল ডেকার ও আর্টিকুলেটেড যুগে প্রবেশ করেছে।
জানা যায়, ডাবল ডেকার, ৫০ সিটের বড় বাস বা আর্টিকুলেটেড বাসের সুবিধা হলো অল্প জায়গায় এইসব গাড়ি অনেক যাত্রী পরিবহন করতে পারে।
যেখানে ছোট বাস রাস্তার অনেক জায়গা দখল করে কম যাত্রী বহন করে। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। তাই যানজট নিরসনে বড় বাস বা আর্টিকুলেটেড বাসের বিকল্প নেই।
এই বাস্তবতায় বিআরটিসি ২০১৩ সালে ভারতীয় ঋণে সে দেশ থেকে ৫০টি আর্টিকুলেটেড (দুই বগি জোড়া লাগানো) বাস কেনে। ওই সময় বাসগুলোর আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছিলো ১৫ বছর।
অথচ বিআরটিসির অবহেলায় কেবল সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তিন বছর না যেতেই বিকলের পথে বাসগুলো। প্রায়শই ঢাকার বিভিন্ন রুটে এই বাসগুলোকে অচল অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।
যারমধ্যে ইতোমধ্যেই ৮টি সর্ম্পূণ বিকল হয়ে পড়েছে ও বিএনপি জোটের আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুইটি। আর এ অজুহাতেই আর্টিকুলেটেড বাস আর না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিআরটিসি।
তবে বিআরটিসির দাবি, উপযুক্ত রুট, ডেডিকেটেড স্টপেজ, ট্রাফিক জ্যাম, অতিরিক্ত মেরামত ব্যয়, যাত্রী ভোগান্তি ও ভাড়া কম হওয়ার কারণেই আর্টিকুলেটেড বাস আর না কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এতে ৫০টি বাসের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেলে নতুন রূপে আর ফিরবে না আর্টিকুলেটেড বাস।
এ প্রসঙ্গে বিআরটিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ৫০টি বাসের মধ্যে দু’টি বাস আর চালানো সম্ভব নয়। ৮টি বাস মেরামতের জন্য ডিপোতে রয়েছে।
‘আর্টিকুলেটেড বাস চলার জন্য আলাদা রুট ও লেন দরকার, যা আমাদের দেশে নেই। তাই আমরা নতুন করে আর কোনো আর্টিকুলেটেড বাস কিনবো না। ’
তবে বিআরটিসি চেয়ারম্যানের এই দাবি সঠিক নয় বলে মনে করছেন আর্টিকুলেটেড বাসের একাধিক চালক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের অভিযোগ, বেশি সংখ্যক ছোট আকারের বাস কিনে কমিশন বাণিজ্য বাড়াতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিআরটিসি।
চালকরা বলছেন, আর্টিকুলেটেড বাসে সাধারণত ১০০ যাত্রী বহনের কথা থাকলেও সেখানে ১৫০জন পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করতে পারে। কর্মকর্তাদের অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিবছরই লোকসান গুনতে হয়।
বেলজিয়ামের ব্রাসেলস বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান ট্রান্সপোর্টেশন অ্যান্ড প্লানিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আর্টিকুলেটেড বাস নিয়ে বিআরটিসির চেয়ারম্যান যেসব কথা বলেছেন তা ঠিক নয়। কেননা পৃথিবীর কোথাও এ বাসের জন্য আলাদা লেন নেই। ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশের মহল্লার গলিতেও বিশাল আকৃতির আর্টিকুলেটেড বাস চলাচল করে।
‘একই পথে ট্রাম, কার, বাস ও আর্টিকুলেটেড বাস চলছে। এখানে হয়তো ট্রাফিক জ্যাম নেই তবে সিগন্যাল আছে। আপনি যদি শুরুতেই কোনো সমস্যা চিহ্নিত না করে সে অবস্থাতেই গাড়ি চালাতে থাকেন এবং এক সময় গাড়িটি রাস্তায় বসে যায়, তখন তো তা মেরামতে অতিরিক্ত ব্যয় হবেই। ’
তিনি বলেন, ডেডিকেটেড স্টপেজ ঠিক করতে না পারার দায় আর্টিকুলেটেড বাসের হতে পারে না। এজন্য যে ব্যবস্থাপনা পরিষদ দায়ী তাকে ছেটে ফেলতে হবে।
বিআরটিসির বর্তমান সিদ্ধান্তে রাজধানীর যানজট আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তার ভাষ্য, ‘বিআরটিসি মাথাব্যাথার জন্য মাথা কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেমন মেরামতে অধিক টাকার দোহাই দিয়ে বিশ্বখ্যাত ভলবো’র দোতলা বাসগুলো নষ্ট করেছে। ’
একই কথা বলেছেন ঢাকার বিশেষজ্ঞরাও। তারা বলছেন, ঢাকার জ্যাম কমাতে ক্রমান্বয়ে ঢাকা থেকে মিনিবাস, কোস্টার ও ছোট গাড়ি কমাতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬
আরএম/এমএ