ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অর্ধেকই জরাজীর্ণ ফেরি, তবুও দায়সারা মেরামত

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬
অর্ধেকই জরাজীর্ণ ফেরি, তবুও দায়সারা মেরামত ফাইল ফটো

ঢাকা: বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) ফেরি বহরে ১২টি রো রো ফেরি, অাটটি কে-টাইপ ফেরি, সাতটি মিডিয়াম ও ছোট ফেরি এবং আটটি ডাম্ব ফেরিসহ মোট ৩৫টি ফেরি রয়েছে।

বহরের ১০টি রো রো ফেরির নির্মাণকাল ১৯৮২ থেকে ৯৩ সালের মধ্যে।

দু’টি রো রো ফেরি ২০০২ সালে চীন থেকে আমদানি করা হয়। আটটি কে-টাইপ ফেরি নির্মাণ করা হয়েছে ১৯৮২ থেকে ১৯৮৩ সালের মধ্যে।
 
অন্যদিকে, আটটি ডাম্ব ফেরির নির্মাণকাল ১৯২৫ থেকে ১৯৩৮ সাল এবং মিডিয়াম ফেরিগুলো ১৯৬৩ সালে নির্মাণ করা হয়েছে। ফেরিগুলোর কোনো কোনোটির আয়ুষ্কাল পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে যাওয়ায় ‘বয়সের ভারে’ দেখা দিয়েছে বেহালদশা। কোনো কোনোটির  আবার অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল বহু আগেই শেষ হয়েছে।

পুরাতন ফেরিগুলো যথাযথভাবে মেরামতের প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। সংশ্লিষ্টরা কোনোরকম দায়সারাভাবে ফেরি মেরামত করেছে। এতে জোড়াতালি দিয়ে চলছে ফেরিগুলো।

সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ফেরির অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ বছর। ৪০ বছরের বেশি পুরাতন ফেরি কোনোভাবেই চালানো যাবে না। এরপরও বিআইডব্লিউটিসি’র অনেক পুরাতন ফেরি জোড়াতালি দিয়ে চলছে।

বিআইডব্লিটিসি’র উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আশিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, অনেক ফেরি আছে বহু আগেই অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পার হয়েছে। আমরা এসব মেরামত করে জনগণের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের বহরে মোট ফেরির মধ্যে অর্ধেকই পুরাতন। ইচ্ছে করলেই পুরাতন ফেরি বন্ধ করতে পারি না। কারণ সেবা অব্যাহত রাখতে হবে। এরপরও সরকারের আর্থিক সক্ষমতার কথা আমাদের চিন্তা করতে হবে।

সূত্র জানায়, ১২টি রো রো ফেরির মাধ্যমে পাটুরিয়া রুটে ফেরি সার্ভিস পরিচালনা করছিল। মাওয়া রুটের ব্যবহারকারীদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালের নভেম্বর থেকে রো রো ফেরি সার্ভিস প্রবর্তন করা হয়। ফেরি স্বল্পতার কারণে বিআইডব্লিউটিসি পাটুরিয়া থেকে দু’টি রো রো ফেরি প্রত্যাহার করে মাওয়া রুটে চালু করে।

পাটুরিয়া সেক্টরে ১০টি রো রো ফেরির মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার যানবাহন দক্ষতার সঙ্গে পারাপারে কষ্টকর হয়ে পড়ছে। অপরদিকে, মাওয়া রুটে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১১শ’ যানবাহন পারাপার করা হয়। রো রো ফেরি স্বল্পতার কারণে আটটি কে-টাইপ ফেরি ও আটটি ডাম্ব ফেরির মাধ্যমে সব যানবাহন মাওয়া রুটে পারাপার করা হয়। এতে পারাপারে অনেক ধীরগতি হচ্ছে, বাড়ছে দুর্ভোগও।

বর্তমানে বিআইডব্লিউটিসি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া, মাওয়া-চরজানাজাত-মাওয়া, মাওয়া-মঙ্গলমাঝি-মাওয়া, চাঁদপুর-শরীয়তপুর-চাঁদপুর, ভোলা-লক্ষ্মীপুর-ভোলা, ভোলা-বরিশাল-ভোলা রুটে ফেরি সার্ভিস চালু রয়েছে। ফেরি সংকটের কারণে এসব রুটে সার্ভিস দিতে হিমশিম খাচ্ছে বিআইডব্লিউটিসি।

মালামাল, যাত্রী ও যানবাহন পরিবহনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সমস্যা হচ্ছে বলে জানায় বিআইডব্লিউটিসি।

সংকট নিরসনে বিআইডব্লিউটিসি’র জন্য রো রো ফেরি, রো রো পন্টুন, কে-টাইপ ফেরি, ইউটিলিটি টাইপ-১ ফেরি ও ইউটিলিটি টাইপ পন্টুন নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ছিল জানুয়ারি ২০০৯ থেকে জুন ২০১৪ সাল নাগাদ। প্রকল্পে মোট ব্যয় ছিল ১১১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও অগ্রগতি মাত্র ২৮ শতাংশ। কোনোরকম দায়সারাভাবে সম্পূর্ণ করা হয়েছে প্রকল্পের কাজ।

প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য একটি রো রো ফেরি, একটি রো রো পন্টুন, দুটি কে-টাইপ ফেরি, সাতটি ইউটিলিটি টাইপ-১ ফেরি ও চারটি পন্টুন নির্মাণ করা।

বিআইডব্লিউটিসি বিভিন্ন ফেরিপথে পরিচালিত সার্ভিস দ্রুত ও কার্ককরী করতেই এই প্রকল্প নেওয়া  হয়েছিল। তবে শতভাগ প্রকল্পের কাজ সফলভাবে না হওয়ায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিঁটেফোটাও সফল হয়নি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ এবং মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সহকারী পরিচালক লসকি চাকমা প্রকল্পের শেষ হওয়া কাযর্ক্রম পরিদর্শন করেন। ইউটিলিটি টাইপ ফেরি কৃষ্ণচূড়ায় করে বরিশাল থেকে ভোলায় যান তিনি।
 
ফেরি কৃষ্ণচূড়ায় অ্যাংকরের হাউস পাইপ তৈরি করার জন্য যান্ত্রিক ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এছাড়া, ফেরির সিঁড়ি ধাপ এবং চারপাশের বাউন্ডারির রেলিং তৈরির কাজে পুরনো রড ব্যবহার করা হয়েছে। অত্যন্ত নিম্নমানের রড ব্যবহার করার কারণে মরিচা ধরে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে।

লসকি চাকমার পরিদর্শন প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ফেরি কৃষ্ণচূড়ার ডেক নিচু হয়ে যাওয়ার কারণে এতে বৃষ্টির পানি জমে আছে। ডেকে জমে থাকা পানি ইঞ্জিন রুমে প্রবেশ করেছে। ফেরিতে ওয়াটার প্রুফ জানালাও নেই।
 
আইএমইডি’র প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, রো রো ফেরি নির্মাণে নিম্নমানের রড, শিট ও নিম্নমানের ডায়নামা ব্যবহার করা হয়েছে। এতে করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আইএমইডি।

তবে বড় ফেরি মেরামত নিম্নমানের হওয়ার কারণে নতুন নতুন ছোট ফেরি কেনায় অধিক মনোযোগী নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) জিকরুর রেজা খানম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের অনেক ফেরি আছে পুরাতন। বড় বড় পুরাতন ফেরি মেরামতের দিকে অধিক নজর দেওয়ার পাশাপাশি ছোট ছোট নতুন ফেরি কেনায়ও নজর দিচ্ছি। এতে করে কম সময়ে যানবাহন ও মালামাল পারাপার করা যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৬
এমআইএস/টিআই/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।