ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর আপিল মামলার শুনানি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন হাইকোর্টের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী।
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল মামলাটির তৃতীয় দিনের শুনানি শুরু হলে এ ঘোষণা দেন বিচারপতি নজরুল।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা) ‘ওকে’ বলে বিষয়টির অনুমোদন দিলে পরে আসামিপক্ষে দ্বিতীয় দিনের মতো যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শুরু করেন মীর কাসেমের আইনজীবী এস এম শাহজাহান। আদালতে উপস্থিত আছেন আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।
রাষ্ট্রপক্ষে আছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের এক নম্বর বেঞ্চে এ শুনানি চলছে। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান।
আদালত থেকে বের হয়ে বিচারপতি নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এ মামলায় অংশগ্রহণ করেছিলাম। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং আইনজীবী হিসেবে এটা করার অধিকার আমার রয়েছে। এটি অসাংবিধানিক নয় কিংবা অনৈতিকও নয়। হাইকোর্ট থেকে আমি গত বছরের ১২ ডিসেম্বর অবসর গ্রহণ করি এবং গত ০৩ জানুয়ারি থেকে নিয়মিত আপিল বিভাগে বিভিন্ন মামলায় শুনানিতে অংশগ্রহণ করে আসছি। আমি ইতোমধ্যেই অন্তত দু’টি মামলায় একই মক্কেলের পক্ষে ও তিনটি মামলায় অপরপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এর সাথে অংশ গ্রহণ করেছি। ওই মামলাগুলোর শুনানি চলাকালে অ্যাটর্নি জেনারেল আমার প্র্যাকটিসের বৈধতা বা নৈতিকতা নিয়ে কোনো আপত্তি উত্থাপন করেননি’।
‘কিন্তু শুধুমাত্র মীর কাসেম আলীর মামলা পরিচালনা করতে গেলেই তিনি আমার প্র্যাকটিসের বৈধতা ও নৈতিকতার প্রশ্ন তুললেন যা অনাকাঙ্খিত’।
তিনি বলেন, ‘আইন ও সাংবিধান সম্মতভাবে আমি মীর কাসেম আলীর আপিলে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু প্রচণ্ড বৈরি পরিবেশের কারণে আমি এ মামলার কার্যক্রম থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হচ্ছি’।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি নজরুল মীর কাসেমের পক্ষে শুনানিতে অংশ নিলে সরকারি সুযোগ-সুবিধা থাকা অবস্থায় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের নিয়ম-নীতি (কোড অব কন্ডাক্ট) মেনে চলার পরামর্শ দেন প্রধান বিচারপতি।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সেদিন বলা হয়, তিনি (বিচারপতি নজরুল) এখনো জাজেস লাউঞ্জ ব্যবহার করেন। ওখানে আইনজীবীদের নিয়ে কথা (মামলার বিষয়ে) বলেন।
এরপর প্রধান বিচারপতি বলেন, অবসরপ্রাপ্ত সব বিচারপতিদের কাছে আশা করবো, সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করা অবস্থায় আপনারা নিয়ম-নীতি (কোড অব কন্ডাক্ট) মেনে চলবেন। হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা আপিলে ওকালতি করার সুযোগ পান। এটা আগে থেকে চলে আসছে।
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, তিনি (বিচারপতি নজরুল) যেটা করছেন, সেটা অনৈতিক।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী অবসরে যান।
১৯৭৭ সালে হাইকোর্টে এবং ১৯৯২ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন তিনি। ২০০১ সালের ০৩ জুলাই তিনি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি নিযুক্ত হন এবং ২০০৩ সালের ০৩ জুলাই হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি নিযুক্ত হন।
গত ০৯ ফেব্রুয়ারি থেকে চলছে মীর কাসেমের আপিল মামলাটির শুনানি। ওইদিন এবং পরদিন ১০ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালের রায় এবং সাক্ষীদের অভিযোগভিত্তিক সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন শেষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন এস এম শাহজাহান।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬
ইএস/এএসআর
** ‘শঙ্কিত’ মীর কাসেমের স্ত্রী
** বিচারপতি নজরুলের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানালেন অ্যাটর্নি জেনারেল
** মীর কাসেমের পক্ষে যুক্তিতর্ক চলছে