ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ

ভূমি অধিগ্রহণের টাকা ছাড়, জুলাইয়ে মূল কাজের টেন্ডার

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬
ভূমি অধিগ্রহণের টাকা ছাড়, জুলাইয়ে মূল কাজের টেন্ডার ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম/ফাইল ফটো

ঢাকা: সুন্দরবন সংলগ্ন খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের ১৬৩ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ মোট ব্যয় ৪৩ কোটি টাকা ছাড় হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে ভূমি অধিগ্রহণের টাকা।

যাতে করে এ অর্থ ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা যায়। এছাড়া ভূমি উন্নয়ন বাবদ মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ কোটি ৩২ লাখ টাকা। মূল প্রকল্পটি শুরুর আগে গুরুত্বপূর্ণ এ কাজ দু’টি প্রায় শেষের দিকে।

চলতি বছরের জুন মাসে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হবে। জুলাই-আগস্ট ‍মাসে টেন্ডার আহ্বান করা হবে। এতে দেশি ও বিদেশি কোম্পানি অংশ নিতে পারবে। এরপরেই শুরু হবে বিমানবন্দর নির্মাণের মূল কাজ।  
 
অন্যদিকে, ২০১৫ সালের ৫ মে একনেক সভা প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদন দিলেও এখনও প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (বিমান ও সিএ উইং) আবুল হাসনাত মো. জিয়াউল হক প্রকল্পটি বর্তমানে দেখভাল করছেন।

প্রকল্প প্রসঙ্গে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে জুনে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হবে। এরপরেই দরপত্র আহ্বান করা হবে। এতে দেশি-বিদেশি কোম্পানি অংশগ্রহণ করতে পারবে। অভিজ্ঞতা ও আমাদের সাশ্রয়ের কথা বিবেচনা করে এমন কোম্পানি কাজ পাবে।
 
তিনি আরও বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ৪৩ কোটি টাকা জেলা প্রশাসকের কাছে প্লেস করা হয়েছে। শেষ পর্যায়ে ভূমি উন্নয়নের কাজ। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হয়েছে। তবে অন্যান্য কাজ এখনও শুরু হয়নি।

প্রকল্প উন্নয়ন প্রস্তাবে (ডিপিপি) দেখা গেছে, পরামর্শক সেবা খাতে ৬ কোটি ৯ লাখ, জ্বালানি পরিবহন খাতে ৩ কোটি ৫০ লাখ, আবাসিক খাতে ১১ কোটি ৬৬ লাখ, ফায়ার সার্ভিস নির্মাণ খাতে ১৫ কোটি ও হ্যান্ড মেটাল ডিডেক্টর, টেলিফোন বাবদ ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

ব্যাগেজ এক্সরে বাবদ ১ কোটি ১০ লাখ, বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণে ৮ কোটি ৫০ লাখ, পানি সাপ্লাই সিস্টেম বাবদ ৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ আছে। একটি জিপ, একটি মাইক্রোবাস, একটি অ্যাম্বুলেন্স, একটি পিকআপ ও একটি মোটরসাইকেল ক্রয় বাবদ বরাদ্দ ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং (এজিএল), রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণ বাবদ ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ আছে।      

জনবল বাবদ ৮৭ লাখ, ইলেক্ট্রো ম্যাকানিক্যাল বাবদ ১৫ কোটি ৮০ লাখ, হাজার কেভিএ সাবস্টেশন বাবদ ৫ কোটি ৭০ লাখ, ৫০০ কেভিএ সাবস্টেশন বাবদ ৪ কোটি, লিফট বাবদ ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ আছে। তবে ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়ন ছাড়া প্রকল্পের আর কোনো অগ্রগতি নেই।

এ প্রসঙ্গে আবুল হাসনাত মো. জিয়াউল হক বলেন, মূল বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য জুলাই মাসে টেন্ডার হবে। এরপরই অন্যান্য খাতের কাজ শুরু হবে।

২০ বছর পর আবারও শুরু হচ্ছে সুন্দরবন সংলগ্ন খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ কাজ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শুরু হয়েছিল বাগেরহাট জেলার রামপালের এ বিমানবন্দরটির নির্মাণকাজ।

বিমানবন্দর নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৯০ কোটি টাকা এবং ৫৪ কোটি টাকা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে এ বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ শেষ করবে। মোট টাকার মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে আসবে ৮০ ভাগ ও সংস্থার টাকা আসবে ২০ ভাগ।

বিমানবন্দরটি আধুনিক ও সময়পোযোগী করার লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, পেভমেন্ট ওয়ার্ক, অপারেশনাল ও আবাসিক ভবন নির্মাণ, ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল, নেভ-এইড ইক্যুপমেন্ট কেনা হবে। এছাড়া বাউন্ডারি ওয়াল, সিকিউরিটি ফেন্সিং, ফায়ার ভেহিক্যাল কেনা হবে, ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেমও উন্নতমানের করা হবে।

বেবিচক সূত্র জানায়, সুন্দরবন শুধু স্থানীয় জনসাধারণের কাছে আকর্ষণীয় নয়, পুরো বিশ্বের কাছেও আকর্ষণীয়। এসব পর্যটন এলাকা দেশি-বিদেশি পযর্টকদের কাছে পরিচিত ও দেশের পর্যটন খাতকে উন্নয়ন করতে বিমানবন্দরটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন ‘সুন্দরবন’ এ অঞ্চলে অবস্থিত। এছাড়া রয়েছে খান জাহান আলী মাজার, ষাট গম্বুজ মসজিদের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এসব পর্যটন এলাকা শুধু স্থানীয় জনসাধারণের কাছে আকর্ষণীয় নয়, পুরো বিশ্বের কাছে আকর্ষণীয়। এগুলো দেশি-বিদেশি পযর্টকদের কাছে পরিচিত ও দেশের পর্যটন খাতকে উন্নয়ন করতে বিমানবন্দরটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

অন্যদিকে প্রস্তাবিত বিমানবন্দরটি দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর, মংলা বন্দর, খুব কাছে হবে। এ এলাকায় গড়ে উঠেছে ইপিজেড ও অন্যান্য বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান। মংলা সমুদ্রবন্দর মংলা ইপিজেড ও অন্যান্য বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান। মংলা সমুদ্রবন্দর মংলা ইপিজেড ও প্রস্তাবিত রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনের প্রস্তাবিত বিমানবন্দরটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

অন্যদিকে হিমায়িত চিংড়ি রফতানির ৬০ ভাগ খুলনা অঞ্চলে উৎপাদিত হয়। রফতানি চিংড়ি শিল্পের বিকাশের জন্য দ্রুত ব্যবস্থার প্রয়োজন সেই লক্ষ্যে নির্মাণ করা হচ্ছে। বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠিত হলে দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ নেটওয়ার্ক সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব-পশ্চিমের দেশগুলোর সঙ্গে আকাশ পরিবহন সেবা প্রসারিত করার লক্ষ্যে এটি বন্ধ হওয়া বিমানবন্দর নির্মাণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬
এমআইএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।