ঢাকা: সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজটি যেন এগোচ্ছে সবচেয়ে সহজভাবে। একের পর এক পাইল পদ্মার পানি-বালুকণা ফুঁড়ে গভীরে যাচ্ছে।
গভীরে নিয়ে যেতে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হাইড্রোলিক হ্যামার সজোরে আঘাত হানছে পাইলের গোড়ায়। সে আঘাতের ভারে নদীর তলদেশের গভীর থেকে আরও গভীরে ঢুকে যাচ্ছে পাইল। ছয়টি পাইল ঘিরে দাঁড়াবে একেকটি পিলার।
চলমান পদ্মাসেতু নির্মাণ কাজের সর্বশেষ চিত্র এমনই।
পদ্মাসেতুর একেকটি পিলারের জন্য এরকম ছয়টি পাইল দাঁড়াবে। তার ওপর হবে পিলার। সেতুর ৪০টি পিলারে প্রত্যেকটির নিচে ছয়টি করে ২৪০টি এবং দুপারের ১২টিতে দু’টি করে ২৪টি পাইল বসাতে হবে। সর্বমোট ২৬৪টি পাইল বসবে। এর মধ্যে চারটি পাইল ড্রাইভ শেষে এখন চলছে পঞ্চম পাইলিংয়ের কাজ।
পাইলিংয়ের পাশাপাশি একই সঙ্গে চলছে অ্যাপ্রোচ রোড (সংযোগ সড়ক) তৈরি, রেললাইন, গ্যাসলাইনসহ অন্যান্য নির্মাণ কার্যক্রম। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মূল সেতুর ২০ শতাংশ, নদীশাসনের ১৫ শতাংশ, অ্যাপ্রোচ রোডের ৬০ শতাংশসহ সব মিলিয়ে গড়ে সেতুটির ৩০ শতাংশের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
চায়না মেজর ব্রিজের প্রকৌশলীরা পদ্মার পাইল তলদেশে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া বর্ণনা দিয়ে জানান, ‘স্ট্যাক ইয়ার্ড থেকে পাইল নিয়ে আসার পর প্রথমেই তার ভেতর ও বাইরের অংশ পরিস্কার করা হয়। এরপর এক হাজার টনের ক্রেনের সাহায্যে তা ওঠানো হয় গাইডিং ফ্রেমে। গাইডিং ফ্রেমের হাইড্রোলিক জ্যাকের সাহায্যে তা ১/৬ অনুপাতে কোণ করে স্ট্যাবল করা হয়। তারপর ক্রেনের সাহায্যে ২৪০০ কিলোজুল ক্ষমতা সম্পন্ন হাইড্রলিক হ্যামার পাইলের ওপর স্থাপন করা হয়।
হ্যামারের ক্ষমতার ১০ শতাংশ লোড (২৪০ কিলোজুল)প্রয়োগ করে প্রথম হ্যামারিং শুরু করা হয়। পাইল মাটির ভেতরে প্রবেশ শুরু করলে আরও বেশি লোডের প্রয়োজন হয়। তখন আস্তে আস্ত হ্যামারের লোড বাড়িয়ে দিতে থাকেন প্রকৌশলীরা।
এভাবে হ্যামারের লোডিং ২০ শতাংশ, ৩০ শতাংশ বাড়তে বাড়তে ১০০ শতাংশের কাছাকাছি বাড়িয়ে পাইল ড্রাইভ করা হয়। বাংলানিউজের কাছে আসা পঞ্চম পাইল ড্রাইভের ভিডিওতে এর একাংশ দেখা গেছে। সেখানে হ্যামারের আঘাত আর শব্দ দু’টিই ফুটে উঠেছে।
মূলত পাঁচটি প্রধান প্যাকেজে ভাগ করে পদ্মাসেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে ১৫০ কোটি ডলার (প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা) ব্যয়ে মূল সেতু নির্মাণ এবং ১০০ কোটি ডলার (প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা) ব্যয়ে নদীশাসন। সঙ্গে রয়েছে তিনটি অপেক্ষাকৃত ছোট প্রকল্প। যার মধ্যে অন্যতম অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ। মাওয়া অংশে কেবলই সড়ক, তবে জাজিরা অংশে রয়েছে সড়কের পাশাপাশি আরও অন্তত পাঁচটি সেতু নির্মাণের কাজ।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬
এসএ/এএসআর