ঢাকা: আপিল মামলার শুনানি থেকে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নিজেকে প্রত্যাহারের ঘটনা রাষ্ট্রের নগ্ন হস্তক্ষেপে ঘটেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মীর কাসেম আলীর স্ত্রী খোন্দকার আয়েশা খাতুন। এ কারণে আদৌ ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে কি-না, তা নিয়ে তার পরিবার ‘শঙ্কিত’ বলে দাবি করেছেন তিনি।
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) আপিল শুনানির তৃতীয় কার্যদিবসে জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেমের আইনজীবী হাইকোর্টের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী শুনানি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। এরপর গণাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এমন মন্তব্য করেন খোন্দকার আয়েশা খাতুন।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আয়েশা বলেন, ‘আমার স্বামী মীর কাসেম আলীর আইনজীবী অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী শুনানীতে অংশগ্রহণ করার পর অ্যাটর্নি জেনারেল তাকে উদ্দেশ্য করে প্রকাশ্যে ব্যক্তিগত আক্রমণ শুরু করেন। আইনমন্ত্রীও তাতে সুর মেলান। সংবিধান বা আইনে সুস্পষ্ট বিধান থাকা সত্ত্বেও বিরামহীনভাবে প্রকাশ্যে ও গোপনে তাকে প্ররোচনা ও হয়রানি করে আজকে মামলা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হল’।
‘মামলায় নিযুক্ত আইনজীবীকে এভাবে হয়রানি করা হল। কিন্তু আপিল বিভাগ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলেন, যা আমাদের চরমভাবে হতাশ করেছে’।
বিজ্ঞপ্তিতে তিনি আরো বলেন, ‘মামলার এই পর্যায়ে এসে নিযুক্ত সিনিয়র আইনজীবী নিজেকে প্রত্যাহার করায় মীর কাসেম আলীর মামলায় প্রচণ্ড নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। রাষ্ট্রের এরুপ নগ্ন হস্তক্ষেপে আদৌ ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে কি-না তা নিয়ে আজ আমরা শঙ্কিত’।
সোমবার মীর কাসেমের পক্ষে দ্বিতীয় দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী এস এম শাহজাহান। মঙ্গলবারও (১৬ ফেব্রুয়ারি) আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য রয়েছে।
গত ০৯ ফেব্রুয়ারি থেকে চলছে আপিল মামলাটির শুনানি। ওইদিন এবং পরদিন ১০ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালের রায় এবং সাক্ষীদের অভিযোগভিত্তিক সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন শেষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন এস এম শাহজাহান।
১০ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী মীর কাসেমের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে অংশ নিলে তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। আদালতে শুনানি চলাকালে সরকারি সুযোগ-সুবিধা থাকা অবস্থায় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের নিয়ম-নীতি (কোড অব কন্ডাক্ট) মেনে চলার পরামর্শ দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা) ।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সেদিন বলা হয়, তিনি (বিচারপতি নজরুল) এখনো জাজেস লাউঞ্জ ব্যবহার করেন। ওখানে আইনজীবীদের নিয়ে কথা (মামলার বিষয়ে) বলেন।
এরপর প্রধান বিচারপতি বলেন, অবসরপ্রাপ্ত সব বিচারপতিদের কাছে আশা করবো, সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করা অবস্থায় আপনারা নিয়ম-নীতি (কোড অব কন্ডাক্ট) মেনে চলবেন। হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা আপিলে ওকালতি করার সুযোগ পান। এটা আগে থেকে চলে আসছে।
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, তিনি (বিচারপতি নজরুল) যেটা করছেন, সেটা অনৈতিক।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬
ইএস/এএসআর