ময়মনসিংহ: ‘আমার ছেলের লাশের টাকা নিয়ে ছাত্রদল নেতারা ছিনিমিনি খেলছেন। মানুষ এতো জঘন্য হতে পারে, সবারই তো মরতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেওয়া সাহায্যের টাকার অর্ধেক প্রায় ১৫ মাস পরেও নিজের হাতে না পাওয়ায় চরম ক্ষোভে এভাবেই বলছিলেন আবুল কালাম।
পঞ্চাশোর্ধ্ব এ বৃদ্ধ ময়মনসিংহের গফরগাঁও পৌর ছাত্রদলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক ইবনে আজাদ কমলের বাবা।
সোমবার (১৫ ফেরুয়ারি) দুপুরে শহরের অমৃতবাবু রোডের প্রেসক্লাব ময়মনসিংহের কার্যালয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় তার ছোটছেলে ইবনে আজাদ কল্লোলও উপস্থিত ছিলেন।
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নির্মম নির্যাতনে ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর প্রাণ হারান ছাত্রদল নেতা কমল।
পরে তার বাবা আবুল কালাম বাদী হয়ে স্থানীয় তিন ছাত্রলীগ নেতা শাহাবুল, বিপ্লব ও রাফজানকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
এ হত্যাকাণ্ডের প্রায় তিন মাসের মাথায় বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ডাক পড়ে নিহত কমলের পরিবারের। তাদের জন্য আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠানের।
সেই অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কমলের মা নুরুন্নাহার ও স্ত্রী খাদিজা আক্তারের হাতে ৮ লাখ টাকার দু’টি চেক তুলে দেন।
নিহত কমলের সন্তানের জন্য ৫ লাখ টাকার একটি চেক স্থানীয় ডাক বিভাগে ফিক্সড ডিপোজিট করা হয়। নগদ টাকা দেওয়ার কথা বলে বাকি ৩ লাখ টাকার চেক ওইদিনই তাদের কাছ থেকে নিয়ে নেন জেলা ছাত্রদল সভাপতি রোকনোজ্জামান সরকার রোকন ও উপজেলা ছাত্রদল সভাপতি মো. নাসিম।
আবুল কালাম অভিযোগ করেন, এর ঠিক ১৫ থেকে ২০ দিন পর নাসিম আমাকে ডেকে তার নিজের অ্যাকাউন্টের ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার একটি চেক দেন। আমি টাকা উত্তোলন করি। কিন্তু বাকি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা আজ দিচ্ছেন, কাল দেবেন বলে আমাদের সঙ্গে ছলচাতুরি করছেন।
কথা বলতে বলতেই চোখের কোণ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল ছেলে হারা এই বাবার। বলতে থাকেন, ‘ওই দুই নেতা আমাদের টাকা না দিয়া খালি ঘুরাইতাছে। ওই ছাত্রদল নেতারা আমাদের না বলেই ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছে। আমাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তারা আমাদের সঙ্গে ছিনিমিনি খেলছে। এর বিচার একদিন আল্লাই করবো। ’
প্রায় ১৫ মাস পরেও সাহায্যের টাকা হাতে না পাওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে গত ৮ ফেব্রুয়ারি লিখিত অভিযোগ করেন প্রয়াত কমলের বাবা আবুল কালাম।
তিনি বলেন, ‘ম্যাডামের কাছে গিয়া বললাম, ম্যাডাম আপনি চেক দিয়েছিলেন। চেকের সম্পূর্ণ টাকা এখনও পাই নাই। ছাত্রদল নেতা রোকন ও নাসিম তো আমাদের টাকা দিতাছে না। ম্যাডাম শুনে অবাক হলেন। তিনি শিমুল বিশ্বাসকে বিষয়টি দেখতে বললেন। ম্যাডাম জানছে এখন টাকা ফেরত পাবো। ’
তবে এমন ঘটনার জন্য দোষী ওই দুই ছাত্রদল নেতার শাস্তিও দাবি করেন তিনি।
এদিকে নিহত ছাত্রদল নেতা কমলের সাহায্যের জন্য জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে লাখ লাখ টাকা তুলেছেন ছাত্রদল নেতারা এমন অভিযোগ করেন কমলের ছোট ভাই ইবনে আজাদ কল্লোল।
তিনি বলেন, আমার ভাই ছাত্রদলের রাজনীতি করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন। আর ওই নেতারা এখন আমাদের টাকাই আত্মসাত করেছেন। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬
এমএ/