নড়াইল: স্বপ্নছোঁয়ার ইচ্ছা নিয়ে লেখাপড়া করে যাচ্ছে নড়াইলের শারীরিক প্রতিবন্ধী আদরী খানম। লেখাপড়া শেষ করে সে হতে চায় সাংবাদিক।
শারীরিকভাবে পুরোপুরি সক্ষম না হলেও থেমে নেই তার সে চেষ্টা। স্বপ্ন তার আকাশছোঁয়া। ছোট (অপূর্ণ) হাত নিয়ে জীবন সংগ্রাম করে যাচ্ছে মেধাবী এ মেয়েটি।
আদরী নড়াইলের মিরাপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের ছাত্রী। এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে গোবরা পার্বতী বিদ্যাপিঠ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে।
আদরীর বাড়ি নড়াইলের পলাইডাঙ্গা গ্রামে। চার ভাইবোন এবং মা বাবাসহ ছয়জনের দরিদ্র সংসার তাদের। বাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকায় কুপির আলোতে লেখাপড়া করে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। প্রায় পাঁচ ইঞ্চি ছোট হাত দিয়ে অবিরাম লিখে যায় আদরী।
পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে আদরী বাংলানিউজকে বলে তার কষ্টের ও স্বপ্নের কথা, আমার বাবা একজন দরিদ্র দিনমজুর। অনেক কষ্ট করে বাবা আমার লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করেন। আমার পাঁচ ইঞ্চি ছোট হাত দিয়ে লিখতে অনেক কষ্ট হয়। তবুও আমি হাল ছাড়তে চাইনা। আমার যত কষ্টই হোক না কেন? আমি লেখাপড়া শেষ করে সাংবাদিক হতে চায়।
প্রতিবন্ধী এ সন্তানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন আদরীর বাবা-মা। আদরীর বাবা ইকবাল মিনা বাংলানিউজকে বলেন, আবাদ করার মতো কোনো জমিজমা নেই আমার, দিন আনি দিন খায়। যে দিন কাজ করতে পারিনা সেদিন ছেলেমেয়েদের নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। কষ্টে চলে আমার সংসার। তারপরও অনেক কষ্ট করে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করি। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখি। আমি চাই আদরী লেখাপাড়া শেষ করে বড় সাংবাদিক হোক। সে সাংবাদিক হতে পারলে আমার সব কষ্ট মুছে যাবে।
নড়াইল সদরের মিরাপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আয়ুব হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আদরী খানম শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও নিয়মিত স্কুলে আসতো। সাধারণ ছেলে-মেয়েরা স্কুলে অনুপস্থিত থাকলেও সে কখনও স্কুলে অনুপস্থিত থাকতো না। সে লেখাপড়ায় খুব মনযোগী। তার প্রতিটা ক্লাসের রেজাল্টও ভাল। এসএসসি পরিক্ষায় আদরী ভাল ফলাফল করবে বলে সবাই আশা করছি।
নড়াইলে প্রতিবন্দ্বীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ডিপিওডির সাবেক পরিচালক ছাব্বির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ডিপিওডির পক্ষ থেকে আদরীকে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। সব সময় তার খোঁজ খবর রেখেছি। জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলা অদম্য এ আদরী একদিন তার স্বপ্নের শিখরে পৌঁছাতে পারবে বলে আমরা সবাই কামনা করি।
ভূমিহীন অসহায় দরিদ্র পরিবারের প্রতিবন্দ্বী আদরীর পাশে কোনো সহৃদয়বান ব্যক্তি দাঁড়াবেন এটাই সবার কাম্য।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৬
আরএ