ঢাকা: দেশের এক কোটি ত্রিশ লাখ জ্যেষ্ঠ নাগরিকের অধিকার বাস্তবায়নে প্রবীণ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আইন-২০১৬ চূড়ান্ত করছে সরকার। এ লক্ষে ইতোমধ্যেই সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় খসড়াটি চূড়ান্ত করতে সব মন্ত্রণালয়ের মতামতও নিয়েছে।
খসড়া চূড়ান্ত করে তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর আইন আকারে জাতীয় সংসদে পাশ হলেই অধিকার বাস্তবায়ন শুরু হবে। যদিও ইতোমধ্যে দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের অধিকার ও বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত করতে সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা অনুযায়ী।
তবে নীতিমালা পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে আইন করা প্রয়োজন বলে মনে করে মন্ত্রণালয় এবং নীতিমালা বাস্তবায়নে গঠিত জাতীয় কমিটি।
২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা- ২০১৩’ এর গেজেট জারি করে সরকার। এই নীতিমালার বাস্তবায়ন কৌশলে বলা আছে, প্রবীণ ব্যক্তিদের প্রতি অবহেলা ও নীপিড়ন থেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনে উপযুক্ত সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করবে সরকার।
নীতিমালায় প্রবীণদের বিশেষ কল্যাণ কার্যক্রমে বলা আছে, প্রবীণদের জন্য কল্যাণমূলক কার্যক্রম গ্রহণ এবং সুবিধা বঞ্চিত অবহেলিত জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের প্রতিষ্ঠানিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রবীণ ফাইন্ডেশন আইন করার বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব চৌধুরী মো. বাবুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যেসব নীতিমালা আছে তার আলোকে এবং জাতিসংঘের নেওয়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনকে সামনে রেখেই আইনটি করা হচ্ছে। দ্রুতই এই আইণের খসড়াটি চূড়ান্ত করা হবে প্রবীণদের অধিকার বাস্তবায়নে।
খসড়া আইনের বিষয় নিয়ে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে জানা গেছে, আইন পাশ হলে আইনের আলোকে প্রবীণ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন গঠন করা হবে। জাতীয় কমিটির সুপারিশের আলোকেই মন্ত্রণালয় এ ব্যবস্থা নিচ্ছে।
দেশের প্রবীণ ব্যক্তিদের কল্যাণে প্রবীণ ব্যক্তি বিষয়ক জাতীয় কমিটি, জেলা প্রবীণকল্যাণ কমিটি, থানা ও উপজেলা প্রবীণকল্যাণ কমিটি এবং পৌরসভা ও ইউনিয়ন প্রবীণকল্যাণ কমিটি করা হয়। জাতীয় কমিটির প্রধান অধ্যাপক এম আর খান।
এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পল্লী ও শহর এলাকায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় প্রকল্প চালু, যাতায়াত ও যোগাযোগ সুবিধা, স্বাস্থ্য ও বয়সের উপযুক্ততা বিবেচনা করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অসচ্ছলদের পোষ্য/নির্ভরশীলদের নিয়ম অনুযায়ী দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিতেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
প্রবীণ উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সমাজ ও পরিবারে প্রবীণরা যাতে অবহেলা, বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার না হন, সেজন্য আইনগত সুবিধা পাওয়ার বিধান থাকবে ফাউন্ডেশন আইনে। প্রবীণরা তাদের সম্পত্তিভোগের অধিকার নিশ্চিত করতে পারবেন এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে।
এছাড়া ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা, সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালেও বিনা মূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হেলথ অ্যাকসেস ভাউচার এবং হেলথ সার্ভিস কার্ড চালু করা হবে, প্রবীণদের স্বীকৃতি হিসেবে তাদের পরিচয়পত্র দেওয়ার বিষয়টিও থাকবে এই আইনে।
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে আরো জানা গেছে, জাতীয় বাজেটে প্রবীণদের জন্য বরাদ্দ রাখারও নির্দেশনা থাকবে আইনে।
২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবীণদের স্বীকৃতি এবং সমাজে অবহেলার শিকার না হয়ে আত্মমর্যাদা ও আর্থিক সচ্ছলতার সঙ্গে বাঁচতে পারেন, সে লক্ষে এ উদ্যোগ নেন। তারই ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ দেশের ষাটোর্ধ্ব প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ প্রবীণকে ‘সিনিয়র সিটিজেন’ ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশ সময় : ১২২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৬
এসএমএ/জেডএম