ময়মনসিংহ: তারামন বিবি। মহান মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত কিংবদন্তি।
ফুসফুস সমস্যা ও শ্বাসকষ্টের কারণে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) তার চিকিৎসা চলছে।
জাতির এ বীরকন্যা শঙ্কিত তার জীবন নিয়ে। চোখে-মুখে উৎকন্ঠার স্পষ্ট ছাপ। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর এবার জীবনযুদ্ধেও তিনি জিততে চান। বুকভরে আরো কিছুদিন নিঃশ্বাস নিতে চান।
দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করানো হলে এ বীরকন্যা সুস্থ হয়ে উঠবেন- এমন মত তার ও তার স্বজনদের। তারা অপেক্ষায় আছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টির।
বাঁচার আকুতি জানিয়ে বীরপ্রতীক তারামন বিবি বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে জীবনবাজি রেখে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলাম। সেই কষ্টের পাওনা হিসেবেই আরো কিছুদিন বেঁচে থাকতে চাই।
মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আলাপ হয় তারামন বিবির সঙ্গে। মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে হাসপাতালের শয্যায় বসে আছেন তিনি। শয্যার দু’পাশে বসে মায়ের দেখভাল করছেন ছেলে আবু তাহের ও মেয়ে মজিদা খাতুন।
এখন আপনার শরীর কেমন- প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমার শরীরটা ভালো না। আজ শরীরটা একটু বেশি দুর্বল লাগছে। সরকার আমাকে অনেক সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। শেষকালে দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করালে মনে হয়, আর ক’টা দিন বাঁচতে পারতাম।
কয়েক বছর আগে তারামন বিবির একটি ফুসফুস নষ্ট হয়ে যায়। ভালো ফুসফুসটিও এখন অকেজো হওয়ার পথে। এ প্রসঙ্গে তারামন বিবি বলেন, ২০১৪ সালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিটিস্ক্যান করিয়েছিলাম। তখন ফুসফুসের এ সমস্যা ধরা পড়েছিলো।
শরীরে আর কী কী সমস্যা আছে, জানতে চাইলাম। মিনিট খানেক কাশিতে গলদঘর্ম হয়ে শেষে অনেক কষ্টে বললেন, কাশির যন্ত্রণায় টিকতে পারছি না। কোমরে প্রচণ্ড ব্যাথা। আর পিঠে মনে হয় আগুন ধরে গেছে। তবে ভালো চিকিৎসা হলেই আমি বাঁচমু।
কথা বলার সময় বার বার তিনি বাঁচার আকুতি জানাচ্ছিলেন। একই আকুতি জানান তার ছেলে-মেয়েরাও। তারামন বলেন, সরকার আমারে বিদেশ নিয়া চিকিৎসা করাইলেই আমি শান্তিতে বুকভরে আবার নিঃশ্বাস নিতে পারতাম। ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে মিশতে পারতাম। আমার বিশ্বাস, বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী আমার একটা ব্যবস্থা করবেন।
মায়ের শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতি হচ্ছে জানিয়ে তারামন বিবির ছেলে আবু তাহের বলেন, ২০১৪ সালে মাকে রংপুর সিএমএইচে ভর্তি করিয়েছিলাম। চিকিৎসার পর মা ভালো হলেও পরের বছরই আবারো অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর মা সেখানে ভর্তি ছিলেন। রংপুরের কুড়িগ্রামে রাজিবপুর কাচারিপাড়া এলাকার সরকারের দেওয়া বাড়িতে থাকাকালে মা আবারো অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সরকারের কাছে আমাদের একটাই আবদার, আমার মাকে যেন দেশের বাইরে পাঠিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আনা হয়, বলেন তিনি।
এরপর তারামন বিবি নিজের হাতে অক্সিজেন মাস্ক খুলে বলতে থাকেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা অনেক বড় মনের মানুষ। তার বাবা আমাকে দেখেছেন। তিনিও আমাকে দেখবেন বলে বিশ্বাস করি।
তারামন বিবির চিকিৎসায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাইফুল বারী ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. এম এ বারীর তত্ত্বাবধানে রয়েছেন।
হাসপাতালে তাদের সঙ্গেও আলাপ হয়। কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাইফুল বারী বাংলানিউজকে জানান, দুপুরে তারামন বিবির চিকিৎসার জন্য ৩ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তার মূল সমস্যা শ্বাস-প্রশ্বাসে।
কয়েক বছর আগে তার টিবি রোগ হয়েছিলো। সেই রোগ থেকে পরবর্তীতে তার ফুসফুসে জটিলতা দেখা দেয়।
সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই তার চিকিৎসা চলছে জানিয়ে ডা. সাইফুল বারী বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে পাঠানোর কথা ভাবছি। হাসপাতাল পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৬
আরএম/