ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পাথর উত্তোলন

ভরছে নদী, ডুবছে আবাদি জমি

রাজিউর রহমান রাজু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৬
ভরছে নদী, ডুবছে আবাদি জমি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পঞ্চগড়: পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে পঞ্চগড়ের তালমা নদীর হাজিরঘাট এলাকায় বালু ফেলে গতিপথ ক্ষীণ করে ফেলেছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। প্রশাসনের চাপে পাথর উত্তোলন বন্ধ হলেও নদীর গতিপথ থেকে বালু এখনও সরিয়ে নেওয়া হয়নি।

এতে তলিয়ে গেছে বীজতলাসহ উজানের অনেক আবাদি জমি।  

দীর্ঘদিন ধরে সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ও অমরখানা ইউনিয়নের  ধনদেবপাড়া, থুকুরিপাড়া ও টোকাপাড়াসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার শতাধিক কৃষক নিচু জমিতে বোরো আবাদ করে আসছেন। সেই সঙ্গে ভূমিহীনরা তালমা নদীর হাজিরঘাটের উজানের দিকে নদীতেই চাষ করেন বোরো ধান।

এই মৌসুমে কৃষকরা বীজতলায় বীজ বপন করে তা রোপনের উপযোগী করলেও মাত্রাতিরিক্ত পানির কারণে তা রোপন করতে পারছেন না। ইতোমধ্যে যারা বোরো ধানের বীজ রোপন করেছেন তা পানিতে তলিয়ে গেছে।
 
স্থানীয়রা জানান, চলতি বছরের শুরু থেকে কিছু অসাধু পাথর ব্যবসায়ী নদী দখল করে পাথর উত্তোলনের পথ বেছে নেয়। কৌশলগতভাবে তারা নদীর পার্শ্ববর্তী জমি পাথর কোয়ারি হিসেবে নির্বাচন করে। পরে ওই নির্বাচিত অংশের সাথে নদী থেকেও পাথর উত্তোলন করতে থাকে। পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে উপরিভাগের মাটি ও বালি ফেলে নদীর প্রবাহ ক্ষীণ করে ফেলা হয়েছে।  

বোমা মেশিন দিয়ে এভাবে পাথর উত্তোলন ও নদী ভরাটের প্রতিবাদে স্থানীয় এলাকাবাসী ব্যবসায়ী হাসান আলী, হাফিজুল ইসলাম, আশরাফুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম ও শুক্কুর আলীর নামে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন।

থুকুরিপাড়া এলাকার কৃষক মতিউল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, আমার দশ একর জমি আছে এই এলাকায়। এখানে আমি প্রতি বছর নিজে এবং অন্যদের বর্গা দিয়ে বোরো আবাদ করি। কিন্তু এই মৌসুমে বীজতলা ও জমি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ প্রস্তুত করলেও হঠাৎ পাথর উত্তোলনকারীদের নদী ভরাটের কারণে আমার সব জমিই পানিতে তলিয়ে গেছে। এই জমিগুলোতে আবাদ করতে না পারলে আমাকেসহ আমার বর্গাচাষিদের পথে বসতে হবে।
 
কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক বাংলানিউজকে জানান, আমি আড়াই বিঘা জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছি। গত কয়েকদিনে পানিতে তলিয়ে যাওয়া আমার বোরো খেত পচে যাচ্ছে। আমরা পাথর ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছি নদীর পানি ছেড়ে দিতে। বিনিময়ে তারা আমাদের ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা গরিব মানুষ কার কাছে যাবো?

নদী ভরাট করে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পেয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ ও নদীর গতিপথ স্বাভাবিক করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ নির্দেশে পাথর উত্তোলন বন্ধ হলেও এখনও নদী থেকে বালু সরিয়ে নেওয়া হয়নি।

স্থানীয়দের ধারণা, সেখানো আবারও পাথর উত্তোলন শুরু হবে। আর নদীর স্বাভাবিক প্রবাহও ফিরবে না বলেও আশঙ্কা তাদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৬      
এমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।