রৌমারী (কুড়িগ্রাম): পুরো উপজেলার প্রায় প্রতিটি সড়কেই রয়েছে বাঁশের তৈরি সাঁকো। অভ্যন্তরীণ এসব সড়কের একটার সঙ্গে আরেকটার যোগ হয়েছে এসব সাঁকোর মাধ্যমে।
সাঁকো দিয়ে কেবল মানুষই নয়, পারাপার হচ্ছে ছোট গাড়ি, নসিমন, রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল ও গৃহস্থালি মালামাল।
নদী বিধৌত উত্তরের জনপদ কুড়িগ্রামের সীমান্ত উপজেলা রৌমারীর ভেতরে এমন একটি দুটি নয়, সাঁকোর সংখ্যা ৪৭টি।
উপজেলাবাসীর নিত্যদিনের কাজে এসব সাঁকো ব্যবহৃত হলেও অনেকটাই ‘দূর্ভোগের ফাঁদ’ হয়ে উঠেছে এসব সাঁকো। চলাচলে ও মালামাল পারাপারে এসব সাঁকোতে অনেক সময়ই ঘটে দুর্ঘটনা। বর্ষাকালে দুর্ঘটনার মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
পরপর দুইবারের বন্যায় উপজেলার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এখন সাঁকোনির্ভর হতে হয়েছে এখানকার বাসিন্দাদের। বন্যার পানির তোড়ে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙন দেখা দিলেও প্রশাসনের ভ্রুক্ষেপ নেই। ফলে এলাকাবাসী নিজেরা এসব ভাঙা অংশে ও খালের ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন।
কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ও খুঁটি নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় দিন-দিন অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে সাঁকোগুলো। এতে করে নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে শিশু ও বৃদ্ধদের পারাপারে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়।
কয়েকটা সাঁকো পারাপারে যাত্রীদের কাছ টোলের নামে ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
গত ৪ ও ৫ নভেম্বর সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বাইমমারী, সায়দাবাদ বাজার, যাদুরচর চাক্তাবাড়ী এলাকায়, বোয়ালমারী, চাক্তাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে, সুইট সোনাভরি নদীর কান্দাপাড়ায় একটি করে ও শালুর মোড়-সাহেবের আলগা করিডোর সড়কের চারটি, চর বোয়ালমারী-দাঁতভাঙ্গা চরের গ্রাম জিঞ্জিরাম নদীর তিন জায়গায় তিনটি, গোয়ালগ্রাম উত্তরপাড়াসহ মোট ৪৭টি বাঁশের সাঁকো রয়েছে। এসব সাঁকো দিয়েই চলাচল করতে হয় উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ১৯৮ গ্রামের প্রায় দুই লাখ মানুষকে।
কর্ত্তিমারী বাজার থেকে বড়াইবাড়ী সীমান্তে বিজিবি ক্যাম্পে যেতে বাওয়াইগ্রাম এলাকায় ও ধরনী নদীতে বাঁশের সাঁকো পার হতে হয়। এর মধ্যে বাওয়াইর গ্রামের সাঁকো পার হতে গেলেই প্রতিজনকে গুণতে হয় পাঁচ টাকা।
২০১৪ সালের দিকে কর্ত্তিমারী-ফুলবাড়ি এলসি স্টেশন সড়কের মাদারটিলা এলাকায় এলজিইডির নির্মিত ব্রিজটি ভেঙে যায়। পরে ওই জায়গায় বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হলেও নড়বড়ে হয়ে গেছে। প্রায়ই সেখানে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
দেখা গেলো, স্থানীয় কাশেম(৫৫), বাচ্চা মিয়াসহ কয়েক ব্যক্তি সাঁকোটি মেরামত করছেন। তারা জানান, সাঁকোটি পুরাতন হওয়ায় পারাপারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। মাঝে-মধ্যেই বাঁশ ভেঙে মানুষ পানিতে পড়ে যায়। তাই মানুষের কষ্ট লাঘবে এটি মেরামত করছেন।
উপজেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক উপজেলা শহর-ফুলোয়ারচর নৌকাঘাট সড়ক। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ওই সড়কের সোনাভরি নদীতে নির্মিত সেতু ভেঙে গেলেও আজও ঠিক করা হয়নি। পরে এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে সেখানে বাঁশের সাঁকো দিয়েছেন।
জেলা সদরে যাওয়ার একমাত্র ওই সড়ক দিয়ে দৈনিক ৮০-১০০টি মোটরসাইকেল, ৬০-৭০টি অটো ভ্যানসহ হাজার হাজার মানুষ পারাপার হয়। কিন্তু এ সাঁকোকে কেন্দ্র করে ব্যবসা পেতে বসেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
৩নং বন্দবের ইউনিয়ন পরিষদ হতে একটি চক্র মাত্র ১৮ হাজার টাকায় লিজ নিয়েছে ৯০ ফুট দীর্ঘ সাঁকোটির। তারা বর্তমানে সাঁকোটি পারাপারে জনপ্রতি পাঁচ টাকা, ব্যাটারিচালিত ভ্যানে ১০ টাকা, অটোরিকশায় মালামালসহ ২০ টাকা হারে টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
এই সাঁকো থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫-৭ হাজার টাকা চাঁদা আদায় হয় বলে জানান, শুক্কুর আলী নামে টোল আদায়কারী।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী নাজমুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সব তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সেতুসহ সড়ক সংস্কারের কাজ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৬
এসআর