ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পাসপোর্ট অফিসে পুলিশ-আনসারের ‘ওপেন দালালি’!

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৬
পাসপোর্ট অফিসে পুলিশ-আনসারের ‘ওপেন দালালি’!

অাগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিস চত্বরে গেলেই অসংখ্য দালালকে আশপাশে ঘুরতে দেখা যাবে। এসব দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতিনিয়ত অসহায় হয়ে পড়ছেন পাসপোর্ট করতে আসা সাধারণ মানুষ।

ঢাকা: অাগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিস চত্বরে গেলেই অসংখ্য দালালকে আশপাশে ঘুরতে দেখা যাবে। এসব দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতিনিয়ত অসহায় হয়ে পড়ছেন পাসপোর্ট করতে আসা সাধারণ মানুষ।

এসব দালালের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন পাসপোর্ট অফিসে দায়িত্বরত আনসার ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা।

সম্প্রতি অাগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস সরেজমিন ঘুরে দালালিতে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর কতিপয় সদস্যের জড়িত থাকার চিত্র দেখা যায়।

অনেকটা খোলাখুলিভাবেই জনসাধারণকে হয়রানি করে দালালি করছেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও আনসারের সদস্যরা।

পাসপোর্ট করতে এসেছেন অনামিকা সরকার। ফরম পূরণে ভুল হওয়ায় তার পাসপোর্টের ফরম বাতিল করে কর্তৃপক্ষ। পরে নিরুপায় হয়ে অফিসের মূল গেটে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত হাসান নামে আনসার সদস্যের কাছে সাহায্য চাইতে গেলে তিনি বলেন, আমি এসব কাজ করি না। আপনি দাঁড়ান পুলিশ সদস্য মনিরকে ডেকে দেই। ও এসব কাজের ওস্তাদ।

পরে মনিরকে খুঁজে না পেয়ে প্রবেশ পথে মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে নারী লাইনের চেকিংয়ের দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য সাজেদাকে ডেকে দেন।

অনামিকা সরকারের কাছে সব বিষয় জানার পর তিনি বলেন, বাতিল করা ফরমটা নিয়ে আসেন। আপনি ২ হাজার টাকা দেন আজকে জমা নেওয়ার সব কাজ শেষ হবে। রশিদ দিয়ে দিচ্ছি-আট দিন পর যার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলবো তার কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে যাবেন।

পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে ঘুরে দেখা যায়, পুলিশের কর্মকর্তা মনির ও আনসার সদস্য সাজেদার দাপট। গেটের মুখে পাসপোর্ট করতে আসা মানুষের কি সমস্যা?-এসব শুনে আলাদা করে তাদের ডেকে নিয়ে যান। তারপর টাকা নিয়ে দ্রুত কাজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজ হাতিয়ে নেন। যেখানে একজন সাধারণ মানুষের ফরম জমা দিতে সারাদিন লেগে যায়, সেখানে তারা ঝামেলা ছাড়াই ৫ মিনিটে ফরম জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
 
পাসপোর্ট করার কথা বলে বাংলানিউজের প্রতিবেদক সাজেদার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, কি সমস্যা বলেন- জরুরি পাসপোর্ট করবেন ৫ হাজার টাকা দেবেন। আর ব্যাংক ড্রাফট করে দিতে হলে সব মিলিয়ে সাড়ে ১২ হাজার টাকা দেবেন। আমাদের চ্যানেল আছে- ইনকোয়ারি থেকে শুরু করে সব কাজ  করে । এক সপ্তাহ পর পাসপোর্ট নিতে আসবেন। আর শুধু ফরম জমা দিতে হলে সাড়ে ৬‘শ টাকা দিলেই হবে। পাসপোর্ট রিনিউ করতেও একই টাকা লাগবে।

অন্যদিকে, পুলিশ সদস্য মনিরকেও নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব ফেলে পাসপোর্টের দায়িত্ব পালন করা নিয়ে ব্যস্ত দেখা গেল। গেট থেকে সেবা নিতে আসা মানুষকে নিয়ে গিয়ে নিজ হাতে ফরম জমা দিচ্ছেন। এর জন্য তিনি মানুষ বুঝে টাকা আদায় করছেন।
এছাড়া সবার সামনেই মনিরকে দেখা গেল পাসপোর্ট করতে আসা মানুষকে বোঝাচ্ছেন, কোনো চিন্তা নাই, ভিতরে শক্ত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে ঝামেলা ছাড়াই পাসপোর্ট করে দেয়া হবে।

পাসপোর্ট অফিসে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মনির ও সাজেদার মত অনেক পুলিশ ও আনসার সদস্য পাসপোর্ট দালালির সঙ্গে জড়িত। কেউ নিজের হাতে করেন, আবার কেউ বাইরে দালালদের মাধ্যমে করেন।

মিরপুর থেকে পাসপোর্ট করতে আসা মাহবুবা আক্তার জানান, এর ‍আগে পাসপোর্ট অফিসের দুর্ণীতির কথা শুনেছি, এখান নিজের চোখে দেখছি। এখানে পদে পদে সবাই টাকা খাওয়ার ধান্দায়। এ কারণে সুষ্ঠুমত কোনো কাজ হয় না। সবারই যদি টাকা খাওয়ার ধান্দা থাকে কাজ করবে কে? বলে পাল্টা প্রশ্ন তোলেন এ ভুক্তভোগী।

পুলিশ সদস্য মনিরের কাছে পাসপোর্টের নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানাতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি কারো কাছ থেকে টাকা নেই না। এরা আমার আত্মীয় একটু সহায়তা করছি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪,২০১৬
এমসি/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।