ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: প্রকৃতি নির্ভর গ্রামীণ জীবনে অগ্রহায়ণই কৃষকের উৎপাদিত প্রধান ফসলের মাস। অগ্রহায়ণের প্রথম দিনে বাঙালির কৃষকের আঙ্গিনা নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে ভরে ওঠে।
বাঙালির এই অসাম্প্রদায়িক সার্বজনীন উৎসব এখন গ্রামীণ জীবন ছাড়িয়ে ইট পাথরের রাজধানী ঢাকাবাসীকেও দেয় ভিন্ন আমেজ।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) পূব আকাশে সূর্য উঁকি দিতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারকলার বকুলতলায় শুরু হয়েছে বাঙালির চিরায়ত এই নবান্ন উৎসব। ‘এসো মিলি সবে নবান্নের উৎসবে’ স্লোগানে উৎসবের আয়োজন করেছে জাতীয় নবান্ন উৎসব উদ্যাপন পরিষদ।
১৮তম বারের মতো উৎসবের আয়োজন করছে সংগঠনটি।
সকাল ৭টা ১ মিনিটে গান, কবিতা, নৃত্য ও বাঁশির সুরে তুলে ধরা হয় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। এতে দলীয় সংগীত পরিবেশন করে সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠী, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, আনন্দনসহ বেশ কিছু সংগঠন। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যজন। গারো কালচারাল একাডেমি পরিবেশন করে জুম নৃত্য।
সকাল ৯টায় প্রধান অতিথি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসবের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের এ উৎসব আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান। সম্ভবত নবর্বষের উৎসবকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে নবান্ন উৎসবকে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এ উৎসবও আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অগ্রহায়ণের প্রথম দিনে সারা দেশে নবান্ন উৎসব উদ্যাপিত হয়। নগরজীবনেও এ উৎসব উদ্যাপন জরুরি। কারণ, চাষীরা আমাদের খাদ্য জোগান। এ উৎসবে যোগ দেওয়া আমাদের একান্ত কর্তব্য’।
অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আজকের দিনে আমরা এমন পরিবেশ কামনা করবো যেখানে কোনো হিংস্রতা, দ্বন্দ্ব, হীনমন্যতা থাকবে না। আমরা সবাই বাঙালি। দেশের উৎকৃষ্ট নাগরিক হবো এটাই আমাদের প্রার্থনা, আকাঙ্খা’।
উদ্যাপন পর্ষদের চেয়ারপারসন লায়লা হাসান বলেন, ‘এটি একটি অসাম্প্রদায়িক উৎসব। নতুন প্রজন্মকে শেকড়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে এ আয়োজন করছি ১৮ বছর ধরে’।
উদ্যাপন পর্ষদের আহ্বায়ক শাহরিয়ার সালাম স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘সারা বিশ্বে নবান্ন উৎসব উদ্যাপিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হওয়া সত্বেও রাষ্ট্রীয়ভাবে এ উৎসব পালন করা থেকে বঞ্চিত’।
এই দিনে রাষ্ট্রীয় ছুটি ঘোষণা করে ‘জাতীয় নবান্ন উৎসব দিবস’ উদ্যাপনের দাবি জানান তিনি।
উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য দেন ল্যাবএইডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মানজার চৌধুরী সুইট।
উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সকাল সাড়ে নয়টায় শোভাযাত্রা বের হয়ে টিএসসি ঘুরে আবার বকুলতলায় গিয়ে শেষ হয়।
উৎসবে আয়োজন রয়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠা-পুলির প্রদর্শনী। স্টলগুলোতে রয়েছে দর্শনার্থীদের ভিড়। নতুন চালের চিতই ও ভাপা পিঠা তাৎক্ষণিকভাবে বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
‘রুপসী বাংলা পিঠা ঘর’- এর স্বত্ত্বাধিকারী কুলসুম বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের স্টলে ২৫ থেকে ৩০ রকমের পিঠা রয়েছে। এ সব পিঠা-পুলি গ্রামে তৈরি করা হয়। এখন আমরা শহুরে পরিবেশেও বানানোর চেষ্টা করছি’।
দিনব্যাপী উৎসবের দ্বিতীয় পর্ব বিকাল তিনটায় শুরু হয়ে চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৬
এসকেবি/এএসআর