সাতক্ষীরা থেকে: সিঁড়ির গোড়াতেই একটি বড় সাইজের নোটিশ বোর্ড। যার উপরে বড় অক্ষরে লেখা ‘সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ফরম বিনামূল্যে’।
উপরের দিক থেকে প্রথমটিতে লেখা জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফরম, তারপর যথাক্রমে পাসপোর্টের আবেদন, খাস জমি বন্দোবস্তের দরখাস্ত ফরম, তথ্য প্রাপ্তি, স্বর্ণের লাইসেন্স, পরিবেশগত ছাড়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, শিক্ষানবীশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফরম।
নিচের লাইনে এসএসসি সার্টিফিকেটের ভুল সংশোধন, ইটভাটা লাইসেন্সের আবেদন ফরম, হোটেল, প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতার আবেদন ফরম বাক্স। এসব বাক্সে উল্লেখিত ফরমগুলো রেখে দেওয়া হয়েছে।
সেবাগ্রহীতা সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানিতে না পড়েন সেজন্যে এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
সেবাগ্রহীতারাও যার যে ফরম প্রয়োজন, নিয়ে চলে যাচ্ছেন। কোনো ফরম ফুরিয়ে গেলেই আবার এনে রেখে দেন জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
অনেকের কাছে বিষয়টি হয় তো সামান্য কিছু-ই। কিন্তু আপনি যদি ফরম প্রাপ্তির কাউন্টার খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে যান। আবার কাউন্টার খুঁজে পেলেন কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা টেবিলে নেই, অথবা অন্য কাজে ব্যস্ত।
কিংবা আপনি গেলেন-এরপর ওই কর্মকর্তা বললেন- ‘ফরম শেষ অন্যদিন আসতে হবে’। আর তখন যদি আপনার বাড়ি হয় প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তাহলে বিষয়টি কেমন দাঁড়ায়?
এভাবে ভাবলে হয়তো যে কেউ স্বীকার করবেন কাজটি সামান্য হলেও এর বিশালতা অনেক গভীরে। এ জন্য ধন্যবাদ পেতেই পারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাস্তবতা এমন। কিন্তু সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ এলাকাবাসীর কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। অন্যদের কাছে অনুকরণীও হতে পারে বলে বলছেন কেউ কেউ।
এ বিষয়ে কথা বললেন জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিনও। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ যতটুকু কমানো যায় যে বিষয়ে তৎপর রয়েছি আমরা।
‘আমরা চাই হয়রানি ও দুর্নীতিমুক্ত সেবা দিতে। ফরম তুলতে এসে যাতে কেউ হয়রানি না হন, সেজন্যে হাতের নাগালে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ফরম। ’
প্রশ্ন ছিলো ‘আপনি কেমন সাতক্ষীরা দেখতে চান’। জবাবে বললেন, ‘সাতক্ষীরা হবে একটি আদর্শ জেলা। দেশের জেলা শহরের তালিকা করা হলে যেন সাতক্ষীরার নাম স্থান পায়। এটাই আমার চাওয়া। ’
**সাতক্ষীরার সুন্দরবন এখনও অনাবিষ্কৃত
‘সাতক্ষীরা জেলাটি খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ। এখানে প্রায় প্রত্যেক পরিবারেই মাছ চাষ ও গবাদি পশু পালন দেখতে পাবেন। এখানকার সবচেয়ে বড় সম্ভাবনার দিক হচ্ছে সুন্দরবনের এই অংশের অপরূপ সৌন্দর্য,’ যোগ করেন জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন।
তার ভাষায়, ‘সুন্দরবনের এ অঞ্চলের সৌন্দর্য অন্য কোথাও দেখতে পাওয়া যাবে না। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে সাতক্ষীরা অন্য সব জেলাকে ছাড়িয়ে যাবে। তবে এই সম্ভাবনাকে সেভাবে কাজে লাগানো যায়নি। এমনকি এ সৌন্দর্যকে সেভাবে তুলে ধরাও যায়নি যথাযথভাবে। ’
এই অঞ্চলকে তুলে ধরার জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
তিনি জানান, এখানকার দেবহাটা মিনি সুন্দরবন, মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, কলাগাছি ইকো পর্যটন কেন্দ্র, দোবেকি ইকো পর্যটন কেন্দ্রসহ বেশ কিছু স্পটকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে।
‘এমনকি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রমণ প্যাকেজও চালু করা হবে। প্যাকেজগুলো হবে অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যে। এখানে প্রশাসনের কোনো ব্যবসার টার্গেট থাকছে না। প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে সাতক্ষীরাকে তুলে ধরা,’ বলেন আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন।
তিনি বলেন, ট্যুরিস্টরা যাতে সাতক্ষীরার এদিকটায় আসতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। একই সঙ্গে বেসরকারি উদ্যোক্তারাও যাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসে। সেজন্যেই আমাদের এ উদ্যোগ।
পর্যটন সমৃদ্ধ অজানা সাতক্ষীরাকে তুলে ধরতে ‘বৈচিত্র্যময় সাতক্ষীরা’ নামে একটি বই প্রকাশ করা হয়েছে বলেও জানান এই উদ্যোগী মানুষটি।
বইটিতে সাতক্ষীরার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও দর্শনীয় স্থানের বর্ণনা রয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, এতে অনেক দর্শনীয় স্থানই আছে যার অনেকগুলোই রয়ে গেছে এখনও অজানা।
বইটিতে জেলার ১১২টি স্পটের সচিত্র বর্ণণা ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন হোটেল, কটেজের ঠিকানা। তুলে ধরা হয়েছে যাতায়াতের বিবরণও। যা একেকজন ট্যুরিস্টের জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ সময়: ০৬১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৬
এসআই/এমএ