ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ রোগীরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৬
ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ রোগীরা ছবি- জি এম মুজিবুর- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

৮৭৫ শয্যা বিশিষ্ট রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল দালালমুক্ত বলে দাবি করে কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা: ৮৭৫ শয্যা বিশিষ্ট রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল দালালমুক্ত বলে দাবি করে কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু সারাদিনই ‍রাজধানীর অন্যতম এ হাসপাতালের আঙিনায়, বাইরে যত্রতত্র দেখা মেলে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের।

এরা এমনই চক্র হয়ে উঠেছে যে, এদের খপ্পর থেকে রোগী ও রোগীর স্বজনদের বের হওয়াটাই মুশকিল। এমনকি, কখনো  কখনো নয়-ছয় বুঝিয়ে রোগীদের ওষুধের নাম ও ব্র্যান্ড বদলে দেন তারা।

মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অবস্থানকালে দেখা যায় এমন চিত্র।

নাক, কান ও গলার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হলেন আল আমিন (৩৫)। মুহূর্তেই তাকে ঘিরে ধরলেন ভিন্ন ভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। এক প্রকার জোর করেই তার কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে মোবাইল ফোনে ছবি তুলে নিলেন ‍তারা। রোগীকে দাঁড় করিয়ে রেখে তাদের মধ্যে চলতে থাকলো চিকিৎসক কি ওষুধ লিখেছেন সে আলোচনা। তখন রীতিমত অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই  চিকিৎসা নিতে আসা আল আমিনের।

ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের কব্জা থেকে মুক্তির পর আল-আমিন বাংলানিউজকে বলেন, এর আগেরবারও এরা এমন আচরণ করেছে। ওদের জন্য আর হাসপাতালেই আসা যাবে না।

হাসপাতালের প্রবেশমুখে মূল ফটকে মালেকা বেগম (২৭) নামে এক চক্ষু রোগীকে কিছু ওষুধের নাম বদলে দিচ্ছিলেন ওষুধ কোম্পানির এক প্রতিনিধি।

রোগীর ব্যবস্থাপত্রে লিখছেন জানতে চাইলে ওই প্রতিনিধি বলেন, রোগী তার আত্মীয় হয়, তাই একই গ্রুপের অন্য ওষুধ লিখে দিচ্ছিলাম। এ সময় তার নাম ও কোম্পানির নাম জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে কথা বলার উছিলায় সটকে পড়েন।

পরে মালেকা  বেগম বাংলানিউজকে জানান, লোকটিও ব্যবস্থাপত্র দেখে তাকে জানিয়েছেন, এই ওষুধগুলো তেমন ভাল না। আপনি এইগুলো (তার লেখা) খাবেন,  দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন।

হাসপাতালের নিরাপত্তায় বহির্বিভাগে দায়িত্বরত আনসার সদস্য রেজাউল (৩৮) বলেন, সকাল থেকে এদের হাসপাতাল থেকে বের করার চেষ্টা করি, কে শোনে কার কথা। ডাক্তারের রুম পর্যন্ত চলে যায় তারা। ডাক্তার আর কি বলবেন। এক কোম্পানিই মাসে ৪-৫ বার মিটিং করে। এত গিফট পেলে কে কি বলবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তবে এ বিষয়ে হাসপাতালটির চিকিৎসকরা বলছেন ভিন্ন কথা। নাম প্রকাশ করতে না চাওয়া চর্ম বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, আমরা ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দুপুর ১টা পর থেকে প্রবেশধিকার দিয়ে থাকি। তাও নির্দিষ্ট দিনে। এছাড়া পূর্ব পরিচিতিদের কেউ মাঝে-মধ্যে আসেন, রুম থেকে তো আর বের করে দিতে পারি না।

হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বাংলানিউজকে জানান, হাসপাতালের পর্যাপ্ত চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, জায়গা এবং শক্তিশালী প্রশাসনিক ব্যবস্থা থাকলেও লোকবলের অভাবে তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারছেন না। নিরাপত্তার সংক্রান্ত বিষয়ও এর মধ্যে একটি।
 
ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্মের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা এসব বন্ধ করতে পারতাম, যদি পর্যাপ্ত লোকবল থাকতো। পুরো হাসপাতাল জুড়ে আমাদের মাত্র ৮ জন সরকারি আনসার রয়েছেন।
 
তবে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে নিজের কোম্পানির ওষুধ লিখে দেওয়ার মতো ঘটনা যেন না ঘটে সে পদক্ষেপ নেবেন বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৬
এসটি/এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।