খুলনা থেকে: থরে থরে সাজানো টবে সবুজ গাছে লাল-হলুদ-নীল-সাদা নানান রঙের ফুল, দু’দিকে চোখ বোলাতে বোলাতেই ভেতরে প্রবেশের দরজা, দরজায় দাঁড়িয়ে আন্তরিক স্বাগত জানালেন গার্ড। ঢুকতেই মন ভালো করে দেওয়ার মতো গোছানো পরিবেশ।
বলছি খুলনার ঐহিত্যবাহী হোটেল রয়্যাল ইন্টারন্যাশনাল রেস্টুরেন্টের কথা। শুধু ইন্টেরিয়র আর স্বাগত জানানোতেই নয়, এখানে খাবার পরিবেশনের মুন্সিয়ানাও মুগ্ধ হওয়ার মতো।
একে একে অর্ডার করা খাবারগুলো যখন আসতে শুরু করলো, রাইসের ওপর রেড বিটের টসটসে লাল গোলাপ। সেটি যে আসল গোলাপ নয়, রেড বিট স্লাইস করে কাটা তাও ধরতে বেশ বেগ পেতে হলো।
পাশেই টমেটো ডিজাইন করে কাটা। ওপর দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এমনভাবে কাটা হয়েছে, দেখতে অবিকল গোলাপের কলির মতো। শশা পরিবেশন করা হয়েছে, সেখানেও ভিন্ন আঙ্গিকে পরিবেশনা, কাটা হয়েছে শাপলা ফুলের মতো।
‘রয়্যাল ইংলিশ রেডি রাইস’ নামে এই খাবার দেখে একজনতো বলেই বসলেন, এমন সুন্দর করে সাজানো, ভাঙতেই মন সায় দিচ্ছে না, খাবো কি করে! কিছুক্ষণ অন্তত উপভোগ করি, তারপর না হয় ভোগ। ভদ্রলোক খানিকটা পরেই শুরু করলেন। একটু পরে মুখে পুরেও বলে উঠলেন আহা দারুণ হয়েছে। মনে রাখার মতো।
দেখা গেল, পরিবেশনে নান্দনিকতা দেখে অনেকে পেটের ক্ষুধা ভুলে খাবারের সঙ্গে সেলফি তোলায় ব্যস্ত।
প্লেটটি সাজানো হয়েছে একবাটি রাইস, চিকেন সাসলিক, বোনলেস ভেটকি মাছ, রয়্যাল ভেজিটেবল ও রাশিয়ান সালাদ দিয়ে। রাশিয়ান সালাদে ব্যবহার করা হয়েছে আপেল, আঙ্গুর, বেদানা, কাজুবাদাম, খিরা, গাজর ও গুঁড়ো দুধ। সবমিলিয়ে প্লেটেই পাওয়া গেল এক নান্দনিক শৈল্পিক ছোঁয়া।
দেখতে যেমন মনভোলানো তেমনি মানের ক্ষেত্রেও কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হয় না বলে জানালেন রয়্যাল ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফারুক। তিনি বলেন, আমরা সবগুলো খাবার সংগ্রহ করি স্থানীয় কৃষকের কাছ থেকে। কোনো ধরনের বাসি খাবার পাবেন না এখানে। আমরা সব সময় সতেজ সবজি ব্যবহার করে থাকি।
যে শশাটি পরিবেশন করা হয়েছে, আজ সকালেই খেত থেকে এগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। আর মাছও আমরা ফ্রিজিং করি না। যে কারণে এখানে যে স্বাদ পাবেন একই মাছ অন্য কোথাও খেলে হয়তো এমন মজা নাও পেতে পারেন।
পরিবেশনে বৈচিত্র্যতা আনার বিষয়ে বলেন, এখন মানুষের রুচিবোধ দিন দিন বদলে যাচ্ছে। সে কারণে অতিথিদের ভালোলাগা আর সন্তুষ্টির জন্যই এই আয়োজন। অতিথিরা এতে খুব মজা করে খাবার উপভোগ করেন। বিদেশিরাও আমাদের খাবারের এমন পরিবেশনায় মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন।
প্রশ্ন ছিল সবাই কি এভাবে প্লেট সাজাতে পারেন। জবাবে বলেন, যারা সাজাচ্ছেন তারাও আমাদের এলাকার ছেলে। তাদের দেখা দেখি আরও অনেকেই শিখে নিচ্ছে।
হোটেল রয়্যাল’র এই প্যাকেজটির দাম ৭২৫ টাকা। এর সঙ্গে পরিবেশন করা রয়েল সবজিও খেতে দারুণ। সুইটকর্ন, গামেনজু, মটরশুটি, মাশরুম, পেঁপে, আলু ও চিচিঙ্গার সবজির স্বাদ অনেক দিন মুখে লেগে থাকবে।
এখানে এসে কাচ্চি বিরিয়ানি না খেলে পরে কিন্তু আফসোস হবে, কেন? স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় খাবারটি এরই মধ্যে পুরো এলাকার ভোজন রসিকদের পছন্দের তালিকায় সবার ওপরে জায়গা করে নিয়েছে।
হোটেলটির প্রথম ফ্লোরে অবস্থিত এই রেস্টুরেন্ট। সকালের নাস্তা শুধু ইন হাউস বোর্ডারদের জন্য। তবে দুপুর ও রাতের খাবারের অতিথি হতে পারেন যে কেউ।
এখানে আগে থেকে কোনো খাবার রেঁধে রাখা হয় না। ক্রেতার পছন্দের মেন্যু অনুযায়ী রান্না করে গরম গরম পরিবেশন করা হয়। অতিথির চাহিদা মতো আলাদা আইটেমও করে দেওয়া হয়, তবে এজন্য অর্ডার দিতে হবে একটু আগে ভাগে।
যারা এখানে থাকতে বা খেতে আসেন তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে থাকে হোটেল রয়্যাল ইন্টারন্যাশনাল রেস্টুরেন্ট।
ঠিকানা: এ-৩৩, খান জাহান আলী রোড, খুলনা। ফোন-০১৭১৮৬৭৯৯০০
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৬
এসআই/জেডএস