ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ফার্মেসির প্রতারণায় দিশেহারা রোগী!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৬
ফার্মেসির প্রতারণায় দিশেহারা রোগী!  ছবি: সুমন- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গত চারদিন ধরে অজ্ঞান অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন রাসেল হোসেনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সামনের ফার্মেসি থেকে প্রয়োজনীয় ঔষধ নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছেন স্ত্রীর কাছে।

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গত চারদিন ধরে অজ্ঞান অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন রাসেল হোসেনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সামনের ফার্মেসি থেকে প্রয়োজনীয় ঔষধ নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছেন স্ত্রীর কাছে।

ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে লিখে দেওয়া ঔষধের সঙ্গে এর মিল আছে কি না, অথবা এগুলোর সঠিক মূল্য নেয়া হয়েছে কি না, তা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই তার। ফার্মেসি থেকে দেয়া ঔষধ সঠিক কি না তা যাচাই না করেই, তিনি ছুটে চলেছেন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

বুধবার (১৬ নভেম্বর) দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সামনে বাংলানিউজের প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় রাসেলের।

এ সময় রাসেলের কাছে ডাক্তারের লিখে দেওয়া সঠিক ঔষধ ও মূল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, ডাক্তার যা লিখে দিয়েছেন সেই ঔষধ ফার্মেসি থেকে দেয়া হয়েছে কিনা সেটা তিনি জানেন না। কেন না তিনি পড়ালেখা জানেন না। তাই ফার্মেসি থেকে তাকে যে ঔষধ দেওয়া হয়েছে সেটা নিয়েই তাকে দ্রুত রোগীর কাছে যেতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, রোগীর অবস্থা বেশি একটা ভালো না। তাই ফার্মেসিগুলো থেকে যে ঔষধ দেন সেটা নিয়েই তাকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। আর যাচাই বাছাই কিংবা মূল্য নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই তার। রোগী বাঁচুক পরে মূল্য নিয়ে মাথা ঘামানো যাবে।

এছাড়া এত রাতে মেডিকেলের সামনের ফার্মেসি ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়ারও সুযোগ নেই। তবে ফার্মেসিগুলো যদি বেশি দাম রাখে তাতে তাদের কিছুই করার থাকে না।

বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ফজলুল হকের মেয়ে শরিফা আক্তার। রান্না করতে গিয়ে শরীরের প্রায় ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে তার। এজন্য মেয়ের ঔষধ নিতে এসেছেন ফার্মেসিতে। কিন্তু ডাক্তার তাকে স্কয়ার কোম্পানির ঔষধ লিখে দিলেও ফার্মেসি থেকে দেওয়া হয়েছে অপসোনিন কোম্পানির। আর এই বিষয়ে ফার্মেসি থেকে বলা হয়েছে দুটো ঔষধেরই একই কাজ। শুধু নাম ভিন্ন। তাই তিনি আর কথা না বাড়িয়ে দ্রুত ঔষধ নিয়ে স্থল ত্যাগ করেছেন। এছাড়া রোগীর আর্তনাদে যখন স্বজনরা দিশেহারা হয়ে পড়েন তখন রোগীর চিন্তায় স্বজনরাও অনেকটা ভেঙ্গে পড়েন। ফলে ফার্মেসিগুলো বিভিন্ন সময় দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে হরহামেশায় চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের ব্যবসা। আর প্রতারণার শিকার হচ্ছে ক্রেতারা। আর এতে মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছেন অসংখ্য রোগী।

ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধ সরবরাহ করা হয় কি না জানতে কথা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের দিবা রাত্রি ফার্মেসির কর্মচারী বিষ্ণুর সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ডাক্তারের দেওয়া প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ফার্মেসী থেকে ঔষধ সরবরাহ করা হয়। তবে সবসময় সব ঔষধ যে ফার্মেসিতে থাকবে সেটা কিন্তু নয়। আর তখন এক কোম্পানি বাদ দিয়ে অন্য কোম্পানির ঔষধ সরবরাহ করা হয়।
 
সেক্ষেত্রে ক্রেতাকে বিষয়টি পুরোপুরি অবহিত করা হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা ফার্মেসি থেকে ঔষধ নেয় তারা দেখে শুনেই নেয়। আর কেউ দেখেশুনে না নিলে আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের কাজ বিক্রি করা, তাই করি! ঔষধ থাকলে বিক্রি করি, না থাকলে করি না।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৬
এসজে/এসআরএস/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।