শাজাহানপুর (বগুড়া) থেকে ফিরে: শীতকালীন আগাম সবজি চাষ অনেক আগেই শেষ করেছেন চাষিরা। এখন সবজি বিক্রি করতে ব্যস্ত তারা।
কাকডাকা সকালেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ছেন বীজতলায়। কাঁচি, কোদালসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি নিয়ে নেমে পড়ছেন জমিতে। কেউ কেউ প্রস্তুতকৃত জমিতে রোপন করছেন বীজ। অনেকেই হাড়ভাঙা পরিশ্রমে ব্যস্ত রোপনকৃত বীজতলা পরিচর্যায়।
সোমবার (১৪ নভেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার শাহানগর, কামারপাড়া, মোস্তইলসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে নতুন নতুন সবজির বীজতলা নিয়ে চাষিদের এমন কর্মব্যস্ততার দৃশ্য দেখা যায়। সারা বেলা চাষিদের নানামুখী কাজের আড্ডা এসব সবজি বীজতলা নিয়ে।
দেখা যায়, বীজতলা প্রস্তুতের পর জমির মাঝ বরাবর নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ছোট ছোট আইল তৈরি করে বীজ রোপন করা হয়েছে। এরপর বাঁশের তৈরি ‘বেতি’গুলো রিংয়ের মতো বসিয়ে ওপর পলিথিন দিয়ে পুরো বীজতলা মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
গরম পরিবেশ সৃষ্টি করতেই এমনটা করা হয়েছে জানিয়ে চাষি আলাল বাংলানিউজকে বলেন, মাঝে মাঝে ঢেকে দেওয়া পলিথিনগুলো সামান্য উঠিয়ে এক পাশ ফাঁকা করে দেওয়া হয়। বাইরের বাতাস বীজতলায় প্রবেশ করতে পারে। বীজ রোপন থেকে শুরু করে প্রথম এক সপ্তাহের মতো এ কার্যক্রম চলে। বীজ গজিয়ে ওঠার পর চাষিরা সেই পলিথিনগুলো সরিয়ে ফেলেন।
এরপর বিক্রির আগ পর্যন্ত নিয়মিত চলে পরিচর্যা। পুরুষের পাশাপাশি এ কাজে নারীদেরও দেখা মেলে। সকাল থেকে সারাদিন বীজতলায় ব্যস্ত সময় কাটান চাষিরা।
এছাড়া দুলাল, উজ্জলসহ একাধিক চাষি জানান, এ উপজেলায় কমপক্ষে শতাধিক সবজি নার্সারি রয়েছে। এসব নার্সারিতে রকমারি জাতের সবজি বীজ উৎপাদন করা হয়। বছরের ৬ মাস এ ব্যবসা চলে।
নার্সারিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, টমেটো, মরিচ, পিয়াজ, রসুন, গাঁজর, পটোল, শিম, বরবটি, পালং শাক, লাল শাকসহ বিভিন্ন জাতের সবজির চারা গাছ পাওয়া যায়।
জাহিদুল ইসলাম, শাহাদৎ হোসেন জানান, বর্তমানে প্রতি এক হাজার পিস ফুলকপির চারা ৭শ’, বাঁধাকপির চারা ৫শ’, মরিচের চারা ৮শ’, টমেটোর চারা ৮শ’ বেগুনের চারা ৫শ’ পিয়াজের চারা ১১শ’ টাকায় বেচা-বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপতরের অতিরিক্তি উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, চলতি রবি মৌসুমে এ জেলায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭ হাজারের অধিক হেক্টর জমিতে সবজি লাগানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, জেলার শাজাহানপুর, সদর, শেরপুর, গাবতলী, শিবগঞ্জ উপজেলায় চাষিরা প্রায় ৩০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে নার্সারি আকারে নানা জাতের সবজি বীজতলা তৈরি করেছেন। আর বীজতলার এসব চারা দিয়ে দিয়ে ২০ গুণ জমি চাষ করা সম্ভব বলেও জানান কৃষিবিদ আব্দুর রহিম।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৬
এমবিএইচ/ওএইচ/আরআই