বাগেরহাট থেকে ফিরে: ঐতিহাসিক বাগেরহাট প্রাচীন একটি জেলা। পর্যটন সমৃদ্ধ ও সম্পদে ভরপুর হলেও এখনও এ জেলা রয়ে গেছে অবহেলিত।
বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) বাগেরহাটের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল মান্নান তালুকদার বাংলানিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন।
আবাসন ব্যবসা ছাড়াও আব্দুল মান্নান নিউ বসুন্ধরা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি, সাবিল গ্রুপ, এ্যাজাক্স জুট মিলস লিমিটেডেরও ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
পাশাপাশি বাগেরহাট ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও দৈনিক প্রবর্তন পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।
পর্যটন সমৃদ্ধ বাগেরহাট জেলার উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েও কথা হয় তার সঙ্গে।
বাংলানিউজ: বাগেরহাট জেলার সম্ভাবনাময় খাতগুলো কী কী?
মান্নান তালুকদার: বাগেরহাট জেলায় রয়েছে ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ, হজরত খানজাহান (রহ.) এর মাজার, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন, অযোধ্যা মঠ বা কোদলা মঠসহ অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। আছে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা। বাগদা ও গলদা চিংড়ি মাছের ঘের রয়েছে এ জেলায়।
‘গলদা চিংড়ির চাষে খ্যাতি থাকায় বাগেরহাটের ফকিরহাটকে বলা হয় দ্বিতীয় কুয়েত। আগামীতে যা হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় লন্ডন। এ জেলা থেকে অনেক রাজস্বও আদায় হয়। এতো কিছু এক সঙ্গে দেশের আর অন্য কোনো জেলায় নেই।
বাংলানিউজ: বাগেরহাটকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে কী করা যেতে পারে?
মান্নান তালুকদার: বাগেরহাটে সুন্দরবনের পাশাপাশি অনেক স্থাপত্য শিল্পের উজ্জ্বল নিদর্শন রয়েছে। এগুলোকে পর্যটকদের কাছে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারলে তারা আকৃষ্ট হয়ে ভ্রমণে আসবেন। এক্ষেত্রে অবকাঠামো, আবাসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন পূর্বশর্ত। আশা করছি নির্মানাধিন পদ্মা সেতু চালু হলে ২১ জেলার মানুষ বাগেরহাটের উপর দিয়ে যাতায়াত করবে। বাড়বে পর্যটক।
বাংলানিউজ: আগামী দিনে কেমন বাগেরহাট দেখতে চান?
মান্নান তালুকদার: আগামী দিনে বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ জেলা হিসেবে দেখতে চাই বাগেরহাটকে। বিশেষ করে প্ল্যান করে বর্তমান এ ছোট শহরটাকে বড় করতে হবে। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি বাগেরহাটের সন্তানরা যারা বিভিন্ন ভালো পর্যায়ে রয়েছেন তাদের অবদান রাখতে হবে। কেবলমাত্র বছরে একদিন যাকাত দিতে নিজ জেলায় এলেই হবে না। জেলার উন্নয়নে বছরে একবার হলেও একত্রিত হয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য সেমিনার করতে হবে। জনমত তৈরি করার জন্য একে অপরকে ফোন, ফেসবুকের মাধ্যমে নিজ জেলার সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
বাংলানিউজ: বাগেরহাটের উন্নয়নে আপনার পরিকল্পনা বা কার্যক্রম কী?
মান্নান তালুকদার: বাগেরহাটকে নিয়ে আমার অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। বেশ কিছু বাস্তবায়নও হচ্ছে। নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেটও আবাসন সমস্যার সমাধানে কাজ করছে। এছাড়া বৃদ্ধাশ্রম, ভিক্ষুকমুক্তকরণ প্রকল্প, বেকারদের কর্মসংস্থান, ঋণগ্রস্তদের ঋণ মুক্তিতে সহায়তা, অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা, অস্বচ্ছলদের পড়াশোনায় সহায়তা, সুপেয় পানির ব্যবস্থায় গভীর নলকূপ স্থাপন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুদান, সমাজ উন্নয়ন মূলক প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতা, অবহেলিত ও দলিত শ্রেণীর লোকজনের সহযোগিতা করে আসছি।
তাছাড়া একটি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, মানসিক হাসপাতাল, মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র ও অবাধ্য শিক্ষার্থীদের জন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলানিউজ: কতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আপনি জড়িত আছেন?
মান্নান তালুকদার: মানুষ মানুষের জন্য ও সু-শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড-এ স্লোগান দু’টিতে আমি বিশ্বাসী। যে কারণে আমি বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অতপ্রোতভাবে জড়িত। বাগেরহাটের খানজাহান আলী ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য, খুলনার গোয়ালখালির জামিয়া রশিদিয়া ক্যাডেট স্কিম মাদ্রাসার সিনিয়র সহ-সভাপতি, বাগেরহাট ইসলামী আদর্শ ক্যাডেট একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি, বাগেরহাট ইসলামী আদর্শ মহিলা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি, বাগেরহাটের ফজলুল উলুম বহুমুখী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি, বাগেরহাটের ফকিরহাটের বেইলী ব্রিজ ফজলুল উলুম বহুমুখী মাদ্রাসার সিনিয়র সদস্য, মোড়েলগঞ্জ মোহসেনিয়া কারিমিয়া কওমী মাদ্রাসার সভাপতি ও মংলা বন্দর ক্যাডেট স্কিম মাদ্রাসার সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছি।
বাংলানিউজ: বাগেরহাটবাসীর কাছে আপনার আহ্বান কী?
মান্নান তালুকদার: এ জেলার বিভিন্ন খাত থেকে বিপুল সংখক রাজস্ব আয় হলেও সেই বাগেরহাট কেন অবহেলিত তা খুঁজে বের করে সমাধান করতে হবে। একটি পরিচ্ছন্ন বাগেরহাট করতে জেলার সন্তানদের বিশেষ করে যারা বিসিএস এর মাধ্যমে প্রসাশনের বিভিন্ন পর্যায় রয়েছেন তাদের এগিয়ে আসতে হবে।
‘ভুলে গেলে চলবে না এ জেলা থেকে অনেক নিয়েছেন তারা। এবার দেওয়ার পালা। সর্বোপরি রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাগেরহাটকে একটি মডেল জেলা করতে হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৬
এমআরএম/এমএ