ঢাকা: একাত্তর সালে সতের, আঠারো বছরের টগবগে তরুণ মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার শ্রীকোল ইউনিয়নের দাইরপোল গ্রামের লুৎফর আলী। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণে উদ্দীপ্ত হয়েছিলেন ভীষণভাবে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ৮ নং সেক্টরের অধীনে বৃহত্তর যশোর কুষ্টিয়া ও রাজবাড়ী অঞ্চলে পাক বাহিনীর ত্রাস ‘আকবর বাহিনী’র প্রধান আকবর হোসেন মিয়ার নেতৃত্বে সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি।
যুদ্ধের পরপরই কনস্টেবল হিসেবে তিনি যোগ দেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে। সেখানে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন শেষে অবসর গ্রহণ করেন।
তবে দুঃখের বিষয় হলো মুক্তিযুদ্ধে নিজের অবদানের জন্য আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি থেকে তিনি বঞ্চিত। সরকারের বর্তমান মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম নেই।
মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নামভুক্তির জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলেও এখনও এ ব্যাপারে কোনো সাড়া পাননি রণাঙ্গনের এই মুক্তিযোদ্ধা।
অথচ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের স্বীকৃতি হিসেবে তার রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আতাউল গণি ওসমানী স্বাক্ষরিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দেশরক্ষা বিভাগ হতে প্রদত্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র।
এছাড়া একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার নাম তালিকাভুক্তির জন্য সুপারিশ করেন আকবর বাহিনীর প্রধান আকবর হোসেন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্যসহ যশোরের পুলিশ সুপার। সুপারিশ রয়েছে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগেরও। তার মুক্তিযুদ্ধে অন্তর্ভুক্তির দাবিদার তালিকা নং-২২৩।
বর্তমানে দুরারোগ্য ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। চিকিৎসার ব্যয়নির্বাহে ইতোমধ্যেই তিনি হয়েছেন সর্বস্বান্ত, প্রহর গুনছেন মৃত্যুর।
তবে যে দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মরণপণ যুদ্ধে, সেদেশের কাছে তার একটাই দাবি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারের স্বীকৃতি লাভ। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর একজন সৈনিক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
স্বীকৃতি নিয়ে মরতে চান মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর, মৃত্যুর আগে এটাই তার শেষ আকাঙ্ক্ষা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৬
আরআই