ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ওরাই রমনা পার্ককে প্রাণবন্ত রেখেছে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৬
ওরাই রমনা পার্ককে প্রাণবন্ত রেখেছে  ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সকালের সূর্যের লালচে আলো ফুটতে না ফুটতেই, পায়ে কেডস জুতো চাপিয়ে হাঁটতে আসেন মধ্যে বয়সী থেকে শুরু করে বুড়ো বুড়িরা। ঘাম ঝড়াতে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। চারদিকে তখনও রমনাতে শীতল বাতাস বয়ে চলে।

ঢাকা: সকালের সূর্যের লালচে আলো ফুটতে না ফুটতেই, পায়ে কেডস জুতো চাপিয়ে হাঁটতে আসেন মধ্যে বয়সী থেকে শুরু করে বুড়ো বুড়িরা। ঘাম ঝড়াতে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

চারদিকে তখনও রমনাতে শীতল বাতাস বয়ে চলে।

এভাবে ভোর থেকে সকাল,সকাল থেকে দুপুর তার পর সন্ধ্যা, সময়ের সাথে সাথে মানুষগুলোর পরিবর্তন হয়, বয়সগুলো পরিবর্তন হয় কিন্তু সেই একই ভাবে প্রাণবন্ত থাকে রাজধানীর অন্যতম প্রাকৃতিক সুন্দর এই রমনা পার্ক।
 
শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এমনই বিভিন্ন চিত্র চোখে পরে এই পার্কে।

রমনা পার্কের দিনগুলো কাটে এমনই ব্যস্ততায়। সূর্য ওঠার সাথে সাথে  স্বাস্থ্য সচেতন মানুষগুলো হাঁটতে শুরু করে, কেউ বা কানের ভিতর হেড ফোন দিয়ে, কেউ বা ৩-৪ জনের দল সাজিয়ে, তার চেয়ে বেশি মজার কথা, কেউ আবার হাঁটাহাঁটির সংগঠনের সাথেও যুক্ত থাকে।

এদিকে  মহিলারা বেশিরভাগ অবশ্য, স্বামীকে সাথে করে হাঁটতে আসেন। হাঁটাহাঁটির ফাঁকে ঘর সংসারের আলাপও সেরে নিয়ে থাকেন।

হাঁটাহাঁটির এক ফাঁকে সরকারি চাকরিজীবী আকতারুজ্জামান (৪৫) বাংলানিউজকে বলেন, এই ইট পাথরের শহরে এর চেয়ে সুন্দর প্রকৃতি আর কই পাব? মনটা একদম ভাল হয়ে যায় এই গাছগুলোর ছায়ায় এসে, তাই বারবার ফিরে আসি সবুজের এই পথে।

স্বাস্থ্য সচেতন এই দল চলে যাবার পর আসে অন্য এক দল যাদের বন্ধু বান্ধব নেই, কোথাও যাবার জায়গা নেই, কাজ নেই, এখানে এসে গাছের নিচে বসে বন্ধু তৈরি করে আড্ডা মেরে তাদের দিন কাটে, অথবা খবরের কাগজের লাইন বাই লাইন মুখস্থ করাই তাদের কাজ।
 
এমনই একজন আব্দুল মালেক (৬৫), তিনি বাংলানিউজকে জানান, চাকরি করতে আর ভাল লাগছিল না, বার বার মনে হচ্ছিল এবার নিজেকে সময় দিতে হবে, সারা দিন বাসায় বসে থাকতে থাকতে ভাল লাগে না, তাই এখানে এসে বসে থাকি, মানুষ দেখি, ভাল লাগে, শুধু আমি না আরও অনেকেই আছে তাদের সাথে গল্প করি, বেশ ভালই আছি, শীতল শান্ত এই পরিবেশে।

টিউশনি ফাঁকি দিয়ে কয়েকজন তরুণ এসে ছুটে বেড়াচ্ছে মহা আনন্দে । কয়েকজন আবার রীতিমত খেলার আসর পাতিয়ে বসে পড়েছে। এই তরুণরা যেন তাদের হারিয়ে যাওয়া তারুণ্য ফিরে পেয়েছে।
এদিকে প্রেমিক প্রেমিকাদের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল এই রমনা পার্কের আকাশ, বিকেলের দিকে যে দিকেই তাকানো কেবলই প্রেমিক জুটি, কাধে মাথা ঠেকিয়ে,বিড়বিড় করে কথা বলছে আর দুই জনের ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনছে। খুব সামান্য কারণেই হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের গায়ে ঢলে পড়ছে।

তেমনি এক জুটি আকাশ (২৪) আর মিরা (২১)। বাংলানিউজকে তারা জানান, ঢাকা শহরে সব চেয়ে নিরাপদ বসার জায়গা হল এই রমনা পার্ক, আপনি পরিবার নিয়ে আসতে পারবেন, বন্ধু বান্ধব নিয়ে আসতে পারবেন, এখানকার পরিবেশ খুব ভাল! অন্য জায়গার মতো টোকাইয়ের উৎপাত নেই, হয়রানি নেই।

সন্ধ্যার পর থেকে আস্তে আস্তে কমতে থাকে মানুষের আনাগোনা। একত্রিত হতে থাকে বাস্তুহারা মানুষজন, হাজির হয় সারাদিনের কষ্টের উপার্জনের টাকা নিয়ে, পলিথিনের ছাউনির নিচে রাত কাটানোর দারুন বন্দোবস্ত। তিনটে ইটের উপরে পাতিল বসিয়ে রান্না করা খাবার খেয়েই শেষ হয়, তাদের জীবনের একটি দিন, শেষ হয় রমনা পার্কের একটি দিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৬           
এসটি/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।