ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘রোগীকে নিজের পরিবারের সদস্য মনে করুন’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৬
‘রোগীকে নিজের পরিবারের সদস্য মনে করুন’

প্রত্যেক রোগীকে নিজের পরিবারের সদস্য মনে করে আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দিতে চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকা: প্রত্যেক রোগীকে নিজের পরিবারের সদস্য মনে করে আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দিতে চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবার ওপর আস্থা তৈরি করারও পরামর্শ দেন চিকিৎসকদের।

শনিবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর হোটেল ৠাডিসনে অ্যাসোসিয়েশন অব থোরাসিক অ্যান্ড কার্ডিওভাসকুলার সার্জন্‌স অব এশিয়া’র ২৬তম বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনকালে এ আহ্বান জানান তিনি।

চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘চিকিৎসা শুধু একটি পেশা নয়, এটি একটি মহান ব্রত। নিষ্ঠা ও মেধা প্রয়োগ করে বিশেষজ্ঞ হয়েছেন। আর্ত-পীড়িতদের সেবাদানের সামর্থ্য অর্জন করেছেন’।

‘আপনাদের মধ্যে সেবাদানের মনোভাব তৈরি করতে হবে। প্রত্যেক রোগীকে নিজের পরিবারের একজন সদস্য মনে করে সেভাবে সেবা প্রদান করতে হবে’।

দেশের চিকিৎসাসেবার ওপর জনগণের আস্থা তৈরি করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণকে শুধুমাত্র চিকিৎসা দিলেই চলবে না। চিকিৎসাসেবার ওপর মানুষের আস্থা তৈরি করতে হবে’।

‘যাতে মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশমুখী না হন’।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে একটি ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতামুক্ত মধ্যম-আয়ের বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। যে বাংলাদেশে মানুষ রোগ-শোকে ভুগবেন না, সব ধরণের মৌলিক অধিকার ভোগ করবেন। এ লক্ষ্য অর্জনে চিকিৎসক সমাজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমার প্রত্যাশা, আপনারা সে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন’।

হৃদরোগ বিষয়ে গবেষণার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধি করে হৃদরোগের মৃত্যুহার কমানো যাবে না। কেন এতো বেশি মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, কীভাবে হৃদরোগ থেকে মুক্ত থাকা যায় - এসব বিষয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন’।

হৃদরোগ চিকিৎসায় বাংলাদেশের সফলতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমানে সরকারি পর্যায়ে শুধু জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হৃদরোগের অপারেশন হলেও খুব শিগগিরই এ সেবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং খুলনায় শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালে চালু হতে যাচ্ছে’।

‘হৃদরোগের শল্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিগত ৩ দশকে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। আগে যে হারে মানুষ বিদেশে যেতেন চিকিৎসার জন্য, এখন তা অনেক কমে গেছে’।

মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা এখন সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে পৌঁছেছে। তৃণমূলের প্রান্তিক মানুষ নামমাত্র মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন’।

‘১৬ হাজার ৪৩৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে প্রায় ৩০ ধরনের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে’।

তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের ফলে সকল জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে মোবাইল ফোনে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান এবং বিভিন্ন হাসপাতালে টেলিমেডিসিন সেবা প্রবর্তনের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে শিক্ষা ও সেবার প্রসারে সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত সাড়ে ৭ বছরে দেশে নতুন ১৬টি সরকারি ও ৫টি আর্মি মেডিকেল কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ১০ হাজার ৬৬২টি নতুন শয্যা যুক্ত করেছি। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৩শ’ ৪৫টি নতুন চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে’।

‘চিকিৎসা শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে মোট ১২ হাজার ৮০৪টি আসন বাড়ানো হয়েছে। আমাদের সরকারের সাড়ে সাত বছরে ১২ হাজার ৭২৮ জন সহকারী সার্জন এবং ১১৮ জন ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে’।

নার্স নিয়োগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত ৫ হাজার নতুন নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আরও ১০ হাজার নার্স ও ৩ হাজার মিডওয়াইফ নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। নার্সদের পদমর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে’।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৃথক অত্যাধুনিক বার্ন ইউনিটসহ দেশের সরকারি বৃহৎ হাসপাতালগুলোতে বার্ন ইউনিট খোলা, খুলনায় শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডাইজেস্টিভ ডিজিজ রিসার্চ ও হাসপাতাল নির্মাণ, জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটকে ৩শ’ শয্যায় উন্নীত করা, ২শ’ ৫০ শয্যা বিশিষ্ট জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল স্থাপন, সরকারি কর্মচারীদের জন্য ১শ’ ৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল এবং জাতীয় ইএনটি ইনস্টিটিউট স্থাপন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের উদ্যোগে ২শ’ ৫০ শয্যা বিশিষ্ট শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেমোরিয়াল হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা স্মরণ করে আগামীতে রাজশাহী ও চট্টগ্রামে আরও দু’টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগের কথা জানান তিনি।

প্রসিদ্ধ কার্ডিয়াক সার্জন অধ্যাপক ডা. অসিত বরণ অধিকারীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, অ্যাসোসিয়েশন অব থোরাসিক অ্যান্ড কার্ডিওভাসকুলার সার্জন্স অব এশিয়া’র প্রেসিডেন্ট ডা. গেরারডো এস ম্যানজো ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৬
এমইউএম/এএসআর

**
সম্মিলিতভাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনমত গড়ুন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।