ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

যন্ত্রদানবের তাণ্ডবে বিলীন জাফলংয়ের সবুজ প্রকৃতি

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৬
যন্ত্রদানবের তাণ্ডবে বিলীন জাফলংয়ের সবুজ প্রকৃতি ছবি: আবু বকর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অপার সৌন্দর্যের জাফলং বন বিভাগের সবুজ বনায়ন সাবাড় করছে কতিপয় অবৈধ দখলদার। যন্ত্রদানবের তাণ্ডবে বিলীন হচ্ছে পর্যটক আকর্ষণের এ সবুজ প্রকৃতি। বৃক্ষ নিধনের পর মাটি কেটে তৈরি করা হয়েছে পাথর স্টক ইয়ার্ড। বসানো হয়েছে পাথর ভাঙার ‘যন্ত্র দানব’ ক্রাসার মেশিন।

সিলেট: অপার সৌন্দর্যের জাফলং বন বিভাগের সবুজ বনায়ন সাবাড় করছে কতিপয় অবৈধ দখলদার। যন্ত্রদানবের তাণ্ডবে বিলীন হচ্ছে পর্যটক আকর্ষণের এ সবুজ প্রকৃতি।

বৃক্ষ নিধনের পর মাটি কেটে তৈরি করা হয়েছে পাথর স্টক ইয়ার্ড। বসানো হয়েছে পাথর ভাঙার ‘যন্ত্র দানব’ ক্রাসার মেশিন।  

সিলেটের সীমান্তবর্তী তামাবিল থেকে জাফলং সড়কের দু’পাশের প্রায় ২৫ একর ভূমি এভাবে দখল হয়ে আছে বলে জানিয়েছেন বন কর্মকর্তারা। ভূমি পুনরুদ্ধারের বিপরীতে দখলদারদের বিরুদ্ধে ঝুলছে বন বিভাগের দায়ের করা শতাধিক মামলা।

অসহায় বন বিভাগ জমির মালিক থাকলেও ভোগ দখলে রয়েছে প্রভাবশালী চক্রগুলো। দখলদারদের উচ্ছেদ করতে গেলে উল্টো প্রভাবশালী চক্রের হামলার শিকার হতে হয় বন কর্মকর্তাদের। সেই সঙ্গে প্রভাবশালী চক্র নেপথ্যে থেকে বন কর্মকর্তাদের বিবাদী করে একের পর এক মামলা ঠুকছে।  

সরেজমিনে দেখা যায়, ২০০৪ থেকে ২০০৭ সালে রাস্তার দু’পাশের বন বিভাগের ভূমিতে লাগানো বৃক্ষরাজি সাবাড় করে বিরান ভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। চারদিকে শুধু পাথরের ডাম্পিং ইয়ার্ড আর ক্রাসার মেশিন। সড়ক ঘেঁষা জমির ওপর স্থাপিত স্টক ইয়ার্ডে লেখা স্বত্বাধিকারী মিজান আজিজ সুইট নামে জনৈক ব্যবসায়ীর একটি সাইড অফিস।  
১২২ ও ১৩৬ দাগের ভূমির মধ্যখানে রাস্তার অপরপ্রান্তে বন বিভাগের টিলার ওপর কাঁচা বাঁশের বেড়ার ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। পাথর ব্যবসায়ীরা গাছ ও মাটি কেটে নির্মাণ করেছেন পাথর স্টক ইয়ার্ড ও সাইড অফিস। ভারত থেকে আমদানি করা এলসি পাথর রাখা হয়েছে বন বিভাগের জায়গায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বন বিভাগের জায়গায় স্থাপিত ক্রাসার মেশিনের প্রতিটি প্লট বছরে দুই/আড়াই লাখ টাকা ভাড়া আদায় করে আসছে দখলে থাকা প্রভাবশালী চক্র। পরিবেশ বিধ্বংসী এমন কর্মকাণ্ডে অভিযোগের তর্জনি রয়েছে স্থানীয় বন বিভাগের বিট কর্মকর্তার দিকেও।  

বন বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, গোয়াইনঘাট উপজেলার চৈলাখোল মৌজার তৃতীয় খণ্ডের জেএল-৮২ এর সাবেক ১২২ দাগের প্রায় ১০ দশমিক ৭২ একর জমিতে রয়েছে ক্রাসার জোন। ওই দাগের ভূমি মিজান আজিজ সুইটসহ একাধিক ব্যক্তির দখলে। এছাড়াও ওই মৌজার অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন দাগের ভূমি থেকে বনভূমি সাবাড় করে বিচ্ছিন্নভাবে দখল করে নেওয়া হয়েছে। এমনকি ১২২ দাগের ১০ দশমিক ৭২ একর ভূমি দখলের বিষয়ে বন বিটের কর্মকর্তা বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে অবগত করেননি।  

বনবিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ২৫ একর ভূমি বেদখলের সত্যতা স্বীকার করলেও জাফলং বিট কর্মকর্তা আব্দুল খালিক ১২২ দাগের কিছু ভূমি দখলের তথ্য দেন।  

এছাড়া মিজান আজিজ সুইট নির্মিত স্টক ইয়ার্ডের সাইড অফিস বন বিভাগের ভূমিতে নয় বলেও জানান তিনি।  
 
অথচ বন বিভাগের মানচিত্রে দেখা যায়, এই ভূমির মালিক বন বিভাগ। সেটেলমেন্ট অফিসে শুনানির রায়ও বন বিভাগের পক্ষে আসে।  

এদিকে, ভূমির দখল ঠেকাতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম।  

এরই মধ্যে তামাবিল থেকে জাফলং সড়ক সংলগ্ন ১৩৮ দাগের ভূমিতে এক হাজার ফুট সীমানা প্রাচীর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।  

এই কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, জাফলং বন বিটে প্রায় ৬ হাজার ৭ একর ভূমির মধ্যে ২৫ একর বেদখলে। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি অপদখলী ভূমি উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ জন্য মামলাও করেছেন তিনি। জেলা প্রশাসন থেকে বন্দোবস্ত নেওয়া ব্যক্তিদের বন্দোবস্ত বাতিলের সুপারিশ করেছেন। কিন্তু প্রভাবশালী দখলদাররা খুবই চতুর। তারা বিভিন্ন লোকজনকে বাদী সাজিয়ে পর্যায়ক্রমে মামলা দিচ্ছে।  

তিনি আরও বলেন, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে গিয়েও অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছি। তবে ভূমি রক্ষা করতে সীমানা প্রচীর দেওয়ার বিকল্প নেই।  

এ বিষয়ে ব্যবসায়ী মিজান আজিজ সুইট বাংলানিউজকে জানান, ওই মৌজার ১২৭ ও ১২৯ দাগে ২ একর ১৭ শতক জমি খরিদ শর্তে মালিক তিনি। স্টক ইয়ার্ড লেখা ঘরটি ওই জমির উপরে।  

এ জমির ওপর বন বিভাগের আপত্তির বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।  

বন বিভাগ ২৫ একর ভূমি বেদখল দাবি করলেও বেদখল ভূমির পরিমাণ দেড়শ’ একর ছাড়িয়ে যাবে বলে জানান এ ব্যবসায়ী।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৬
এনইউ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।