রংপুর: রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে ছবির মতো সবুজে মোড়ানো গ্রাম রামনাথপুর ইউনিয়নের খোর্দ্দবাগবাড় মিশনপাড়া।
গ্রামের বাইরের রূপ আর দশটা গ্রামের মতো হলেও, এর ভেতরের রূপটা অন্যরকম।
বসতবাড়ির বাইরে অন্য কোনো জমি বা সম্পদ না থাকায় এদের জীবিকার প্রধান উৎস্য ধানের মৌসুমে বিভিন্ন গ্রামের ধানখেতে ইঁদুরের গর্ত থেকে সংগ্রহ করা ধান।
ইঁদুরের খেত থেকে সংগ্রহ করা ধানে সারাবছর না চলায়, অবসর সময়ে বা সুযোগ পেলে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ধরে বিক্রি করেন তারা।
এভাবেই চলছে এ সম্প্রদায়ের প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। পুরুষ থেকে পুরুষ। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সভ্যতা, সংস্কৃতি ও দেশ এগুলেও রাউথরা পড়ে আছেন এখনো তাদের নিজস্ব কৃষ্টি আর আদিম পেশাতেই। সম্প্রতি সরেজমিনে খোর্দ্দবাগবাড় মিশনপাড়া ঘুরে ও রাউথ সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেলো।
তারা জানান, ধানের মৌসুমে প্রতিদিন ভোরের তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে ১০ থেকে ২৫ কিমি পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রাম ও ফসলের মাঠে পায়ে হেঁটে যান। এরপর ধান কেটে নেওয়া বিভিন্ন খেতের বিভিন্ন গর্ত খুঁড়ে ধান সংগ্রহ করেন। এই ধান দিয়েই বছরের বেশিরভাগ সময় জীবিকা নির্বাহ করেন তারা।
গর্ত থেকে ধান সংগ্রহ করতে গিয়ে কখনো কখনো সাপ ধরা পড়ে। এছাড়া ধান মৌসুম শেষে একইভাবে গর্ত ও মাঠ-ঘাট খুঁজে সাপ শিকার করেন তারা। পরে এসব সাপ বেদে সম্প্রদায়ের কাছে বিক্রি করেন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে।
খোর্দ্দবাগবাড় মিশনপাড়ার সহদর রাউথ (৬৫) জানান, প্রতিদিন দূর-দূরান্তে ধান সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা জনপ্রতি ৪ থেকে ৭ সের পর্যন্ত ধান পান। ধানের সঙ্গে যেদিন সাপ পান সেদিনের কষ্টটা সার্থক হয়।
তিনি জানান, এ বয়সে দূর পথ পাড়ি দিতে আর ভাল লাগে না। কিন্তু এ ছাড়া কি-ই বা করার আছে তাদের। ? তিনি নিজেকেই প্রশ্ন করেন, এতটুকু ধান দিয়ে কি সংসার চলে?
নিরু রাউথ (৫০) ও নান সুরুজ রাউথ (৫৫) জানান, তাদের এ পাড়ায় ৭০ পরিবারের বাস। অনাহার আর অর্ধাহার তাদের নিত্যসঙ্গী। কিন্তু বয়স্কভাতা বা বিধবাভাতা কিংবা ভিজিএফ কার্ড কিছুই পান না তারা।
কয়েক বাসিন্দা জানান, তাদের পাড়ার সবাই হতদরিদ্র। কিন্তু সরকারের ১০ টাকা কেজি মূল্যের চালের কার্ড পেয়েছেন মাত্র ৪ জন।
সংবাদকর্মী দেখে এগিয়ে আসেন বয়সের ভারে ন্যূজ্ব লাখ রজি রাউথ (৭২)। তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। এ বয়সেও যদি বয়স্কভাতা না পাই
তাহলে বয়স্কভাতা কাকে দিবে বলেন? একটু লিখে দেন বাবা, যাতে আমার বয়স্কভাতাটা হয়। রাউথ পাড়ার বাসিন্দাদের দুর্দশার বিষয়ে রামনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বাংলানিউজকে জানান, তিনি অল্প কিছুদিন আগে দায়িত্ব নিয়েছেন। রাউথদের সমস্যাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন।
এ বিষয়ে বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কাজি আবেদা গুলশানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
যোগাযোগ করা হলে রংপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ডিউক চৌধুরী বলেন, আমি ঢাকায় রয়েছি। বদরগঞ্জে গিয়ে এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৬
এসআর