ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শিশু-কিশোরের শামুকের হাট   

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৬
শিশু-কিশোরের শামুকের হাট    ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাস্তার ধারে অনেকক্ষণ ধরেই অধীর আগ্রহে ছোট ছোট বস্তা নিয়ে বসেছিল কয়েক শিশু। অবশেষে তাদের অপেক্ষার প্রহর ফুরালো।

বেনাপোল (যশোর): রাস্তার ধারে অনেকক্ষণ ধরেই অধীর আগ্রহে ছোট ছোট বস্তা নিয়ে বসেছিল কয়েক শিশু। অবশেষে তাদের অপেক্ষার প্রহর ফুরালো।

মধ্যবয়সী এক ব্যক্তিকে আসতে দেখেই মুহূর্তে তাদের চোখ চক চক করে উঠলো। লোকটি কাছে আসতেই মৌমাছির মতো তাকে ঘিরে ধরলো শিশুরা।

জানা গেলো, লোকটি শামুক কেনার মজাজন। তার হাতে কচকচে পাঁচ আর দশ টাকার নোট। তাকে দেখে এতোক্ষণ নির্জীব থাকা চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র বিকাশ ও রনি হৈ হৈ করে উঠলো।

পরে কথা বলে জানা গেলো, শিশুদের এ উল্লাসের কারণ মহাজনের হাতের টাকা। তাদের কুড়ানো শামুক বেঁচে যে টাকা পাবে শিশুরা তা নিয়েই ছুটবে দোকানে। কিনবে পছন্দের খাবার। কেউ কেউ কিছু টাকা জমাবে বাবা-মায়ের কাছে।

এমনিভাবেই যশোরের শার্শা উপজেলার বাহাদুরপুর ও লক্ষ্মণপ‍ুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের শিশুরা এখন কুড়িয়ে আনা শামুক বিক্রি করছে।

এখানকার গ্রামগুলোতে হতদরিদ্রের সংখ্যা আশপাশের এলাকার চেয়ে একটু বেশিই। পরের জমিতে শ্রম দিয়ে আর মাছ ধরে চলে জীবিকা। তাই সাধ থাকলেও সাধ্য না থাকায় বেশিরভাই বাবাই তাদের সন্তানদের প্রয়োজনীয় সব ‌আবদার মেটাতে পারেন না।

ফলে ‍অন্য শিশুরা যখন স্কুলে গিয়ে এটা-ওটা কিনে খায় তখন বিকাশ আর রনির মতো দরিদ্র পরিবারের শিশুরা তা চেয়ে চেয়ে দেখতো।  

কিন্তু এখন আর বন্ধুদের খাবারের দিকে লোভনীয় দৃষ্টিতে তাকাতে হয় না রনিদের। স্কুল না থাকলে অবসর সময়ে তারা আশপাশের খাল-বিল ও বাওড়ে হাঁটু পানি বা কাটা জলে শামুক কুড়ায়। পরে ওই শামুক বিক্রি করে এটা-ওটা কিনে খায়। যেদিন শামুক বেশি পায়, টাকাও বেশি আসে। তখন অতিরিক্ত কিছু টাকা বাড়িতে বাবা বা মায়ের কাছে সঞ্চয় করে রাখে তারা।

চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র বিকাশ জানায়, আগে স্কুলে যাওয়ার সময় মা-বাবার কাছে টাকা চাইলে দিতে ‍পারতেন না। তাই স্কুলে বন্ধুরা যখন খাবার খায় তখন সে তাকিয়ে দেখতো। এখন স্কুল ছুটির পর শামুক কুড়ায়। প্রত্যেক দিন ৫ থেকে ৬ কেজি  শামুক পায়। বিকেলে ওই শামুক গ্রামের নূর ইসলামের কাছে বিক্রি করে।  

সে জানায়, প্রতি কেজি শামুকের দাম ৫ টাকা। স্কুলে গিয়ে খরচার জন্য ১০ টাকা করে নিয়ে যায় আর বাকি টাকা মায়ের কাছে জমা রাখে। বাবা ওই জমানো টাকায় তার খাতা-কলম, ব্যাট-বল ও কখনো জামা-প্যান্ট কিনে দেয়।  

গ্রামের শামুক ক্রেতা নূর ইসলাম জানান, কুড়ানো শামুক বিক্রি করে বাচ্চারা তাদের শখ মেটায়, আর তার সংসার চলে।  

৫ টাকা কেজিতে শামুক কিনে শিশুদের ঠকানা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, বিভিন্ন জেলাতে নিয়ে মাছের ঘেরে ওই শামুক তিনি ১০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন। পথে শার্শার নাভরণে পুলিশকে চাঁদা দিতে হয়। পথের খরচ না থাকলে তিনি শিশুদের আরো কেজিতে ২/১ টাকা বেশি দিতে ‍পারতেন।

তবে নাভরণ পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আফজাল হোসেন চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে জানায়, এসব পথে পুলিশ কোনো গাড়ি আটকে টাকা নেয় না।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৬
এজেডএইচ/এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।