ঢাকা: জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি ৬ অর্জনে বাংলাদেশ যেন বিশ্বব্যাপী অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে সেভাবে কৌশলপত্র তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (২০ নভেম্বর) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা-৬, সবার জন্য নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক জাতীয় কর্মশালায় লিখিত বক্তব্যে তিনি এ নির্দেশ দেন।
শেখ হাসিনা অসুস্থ থাকায় কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি। তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।
লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এমডিজি’র মত ‘এসডিজি’র ক্ষেত্রেও আমাদের সাফল্য অর্জন করতে হবে। বিশ্বাস করি দু’টি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে।
“এসডিজি-৬ অর্জনেও বাংলাদেশ যেন বিশ্বব্যাপী অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বা রোল মডেল হয়ে উঠতে পারে তার কৌশলপত্র আজকের এই কর্মশালায় তৈরি করতে হবে। ”
বিশ্বের ১০টি দেশের প্রধানদের নিয়ে গঠিত জাতিসংঘের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পানি বিষয়ক প্যানেলের বিশেষ উপদেষ্টা শেখ হাসিনা নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, গোটা বিশ্বে এই মুহূর্তে ২৪০ কোটি লোক স্যানিটেশন সুবিধাবঞ্চিত। ৬৬ কোটি ৩০ লাখ লোক নিরাপদ পানি বঞ্চিত।
“নিরাপদ পানির অভাবে বিশ্বে বছরে ১০ লাখ মানুষ মারা যায়। যার অধিকাংশই শিশু। প্রতিদিন গড়ে বিশ্বে এক হাজার শিশু বিশুদ্ধ পানির অভাবে প্রাণ হারায়। বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। ”
বর্তমানে বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ জনগণ নিরাপদ পানি পাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশের জনগণের জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছে। শতভাগ মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে চাই। জাতিসংঘ ঘোষিত নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই আমরা তা করতে পারবো।
বর্তমানে দেশের ৬১ শতাংশ মানুষ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় এসেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের আগেই নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় শতভাগ সাফল্য অর্জনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জনগণের জন্য নিরাপদ খাবার পানি ও স্বাস্থ্যকর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে জাতীয় পানি নীতি, ওয়াটার অ্যান্ড সুয়ারেজ আইন, নিরাপদ পানি সরবরাহ নীতিমালা, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, পানি আইন, আর্সেনিক মিটিগেশন অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন প্লানসহ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি উল্লেখ করেন ২৩ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গভীর নলকূপ স্থাপন, ১২ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাকা স্যানিটেশন, লবণাক্ত পানি প্রধান এলাকায় ৭ হাজার পুকুরের পানি ফিল্টার করে লবণাক্ত মুক্ত করা ও ৩২ হাজার ৬ শত গভীর নলকূপ, বর্ষার পানি সংরক্ষণে ৪ হাজার ৭ শত জলাধার তৈরিসহ ১২ শত পুকুর খনন প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথাও।
পানির অপচয় রোধ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষিতে সেচ কিংবা শিল্পায়নসহ শহর উন্নয়নে পানির চাহিদা বেড়েই চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের নানা প্রভাবসহ বাংলাদেশে খরায় পানির সংকট এবং বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসসহ নানা দুর্যোগে পানির অপচয়ও হচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। শুকনো মৌসুমে এখনই পানি দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে।
শতবর্ষের পরিবর্তনের গতি মাথায় রেখে পানি সম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগ ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান -২০১০’ এর কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
এ কর্মশালার আয়োজন করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাফর আহমেদ খান।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৬/আপডেট ১৫৫৮ ঘণ্টা
এমইউএম/এইচএ