ময়মনসিংহ: দৃঢ় মনোবল ও অদম্য ইচ্ছাশক্তিই তার সম্বল। ফলে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।
এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যেও অদম্য কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে।
ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ভাইটকান্দি গ্রামের মুক্তার হোসেনের মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী মরিয়ম। শৈশব থেকেই তার দু’টি হাত বিকলাঙ্গ।
কিন্তু পড়াশোনার প্রতি প্রচণ্ড ঝোঁক তাকে পা দিয়ে লেখার যোগ্যতা তৈরিতে সহায়তা করেছে।
ফুলপুর উপজেলার ভাইটকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গেলেই চোখে পড়বে এ অদম্য মেধাবীর সাহসী প্রচেষ্টা। ওই পরীক্ষা কেন্দ্রেই রোববার (২০ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে মরিয়ম।
এদিন পা দিয়ে লিখে ইংরেজি প্রথম পত্র পরীক্ষা দেওয়ার পর তাক লাগিয়ে দিয়েছে মরিয়ম।
সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, অনেকের চেয়ে মরিয়মের হাতের লেখা ভালো।
সবার সঙ্গেই পরীক্ষা কেন্দ্রের টেবিলে বসে ডান পায়ের বুড়ো আঙুলের মাঝখানে কলম রেখে পরীক্ষার উত্তরপত্রে লিখে যাচ্ছে অবিরাম।
মরিয়মের পরিবার চরম দরিদ্রপীড়িত। দারিদ্র্যের অন্ধকার ঘরে আশার আলো জ্বালাতেই লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে মরিয়ম। তার একমাত্র সম্বল প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস।
মরিয়ম জানায়, দু’হাত ছাড়াই পৃথিবীর আলো দেখেছে সে। সে প্রমাণ করতে চায়, অদম্য ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে যেকোনো প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করা সম্ভব।
একসময় মরিয়ম নিজের খাবার নিজে খেতে পারতো না। কিন্তু এখন পরীক্ষার খাতার মতো পা দিয়ে চামচ ধরে নিজের মুখে নিজেই খাবার তুলে খাচ্ছে। নিজের কাপড়-চোপড়ও নিজেই পরে মরিয়ম।
মরিয়মকে নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই সাধারণ পরীক্ষার্থীর মধ্যেও। মরিয়মের পাশে বসে পরীক্ষা দেওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, মরিয়ম আমাদের মতোই সমান তালে উত্তরপত্র লিখছিল। ওর লেখাগুলোও পরিষ্কার-ঝকঝকে। ইচ্ছাশক্তি থাকলে সব সম্ভব, এর দৃষ্টান্ত মরিয়ম।
এ নিয়ে মরিয়ম বলে, জীবনে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াতে লেখাপড়ার বিকল্প নেই।
মরিয়মের এমন প্রচেষ্টায় মুগ্ধ হয়ে অনেকেই তাকে পাঁচ থেকে ১০ টাকা সাহায্য করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৬
এমএএএম/এনটি/এসএনএস