ঢাকা: রাজধানীর ফুটপাতে পাওয়া যাচ্ছে নানা রোগের ওষুধ। আর সেসব ওষুধের পসরা সাজিয়ে বসেছেন কথিত চিকিৎসকরা।
জীবন বাঁচানো এই ওষুধ কতটুকু সেবনযোগ্য, জনমনে সেটা নিয়েও আছে প্রশ্ন। তবু এই ভেজাল ওষুধ কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ। শনিবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর ফুটপাতগুলো সরেজমিনে ঘুরে এমন চিত্রই লক্ষ্য করা যায়।
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মানুষের জটলা দেখা যায়। সেই জটলার মধ্যে কথিত এক চিকিৎসক মন ভোলানো নানা কথা বলে বিক্রি করছেন বিভিন্ন রোগের ওষুধ। এসব ওষুধে নাকি মেলে ‘সর্বরোগের সমাধান’। বেশ কিছু লোককে সেসব ওষুধ কিনতেও দেখা যায়।
আল-আমিন (৪৬) এমন ওষুধ ক্রেতাদের একজন। মায়ের জন্ডিসের চিকিৎসার নিতে এসেছেন ফুটপাতে। রাস্তা দিয়ে যাবার সময় শুনেছেন জন্ডিস ভালো করে ২ দিনে। এছাড়া নিজেও বাতের ব্যথায় ভুগছেন আল-আমিন।
‘জন্ডিস ভালো হয় দুই দিনে, শরীরে যে রোগই থাকুক না কেন, ৭ দিনের মধ্যে সর্বরোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব’ ফুটপাতের চিকিৎসকের এমন বয়ানে বিশ্বাস করে আল-আমিন দারস্থ হয়েছেন জনৈক ওই চিকিৎসকের।
ওষুধ বিক্রি করতে এই সব মিথ্যা গল্পের বাহিরেও তারা সাজিয়েছে আরেক জগত, অবলীলায় দেখানো হচ্ছে নানা অশ্লীল ছবি, সেই সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা। চিকিৎসা সেবার আড়ালে নিম্ন আয়ের মানুষের অর্থ লুটে নিচ্ছে ঢাকার ফুটপাতে সক্রিয় থাকা প্রতারক চক্র।
এদিকে, ঢাকার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. সনৎ কুমার সাহা বাংলানিউজকে জানান, এই সব ওষুধ ল্যাব টেস্টহীন। এই অনিবন্ধিত ওষুধগুলো রোগ ভালো তো দূরের কথা, রোগীকে আরও নানা জটিল রোগের দিকে ধাবিত করবে। সঙ্গে-সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ারও একটা সম্ভবনা থাকে।
রাজধানীর বুকে প্রশাসনের চোখের সামনেই ফুটপাতে ওষুধ নিয়ে চলছে এই ছেলেখেলা। যদিও ড্রাগ অ্যাক্ট- ১৯৪০ খুব স্পষ্ট বলা আছে, ‘ফুটপাত, বাস, ট্রেন কিংবা অনুমোদনহীন জায়গায় কোনো ধরনের ওষুধ কেনাবেচা চলবে না। ’
ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের পাশের ফুটপাতে, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক পরিচয় দেওয়া মোশারফ আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘গাছ ও গাছলার ছাল থেকে নানা রকম আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরি করে থাকি আমরা। কিছু সিরাপ আকারের ওষুধ, কিছু ট্যাবলেট, আবার রোগ ভেদে মালিশের জন্য ভালো মানের তৈলও পাওয়া যায়। তবে এসব ওষুধের কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। ’
ওষুধের কোনো অনুমোদন বা টেস্ট করা হয় কিনা জানতে চাইলে অজুহাত দেখিয়ে পাশ কেটে যান কথিত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক মোশারফ আলী।
ভেজাল ওষুধ নিয়ে কাজ করা র্যাব হেডকোয়ার্টারের সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বাংলানিউজকে বলেন, এই ভেজাল ওষুধ আর এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের তথ্য আমাদের কাছে আছে। আমরা এর আগেও কয়েকবার অভিযান চালিয়েছি। কিছু সংশোধন হয়েছে, বাকিরা রাজধানীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আবারও অভিযান চালিয়ে, তাদের নির্মূল করা হবে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি আছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৬
এসটি/টিআই