বরিশাল: শীতের আবহ আসতে না আসতেই দক্ষিণাঞ্চল তথা বরিশাল অঞ্চলের নদীগুলোতে দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট।
এ সংকটে ঢাকা-বরিশাল রুট ছাড়াও অভ্যন্তরীণ রুটে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
তাই রুটগুলোতে যাত্রী বহনকারী লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযানের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে ড্রেজিং এর প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। আর তা না হলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বরিশালের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নৌ রুট।
বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানির প্রবাহ ও ভাঙনের ফলে নদীর তলদেশে পলি জমে সৃষ্টি হয় ছোট-বড় অসংখ্য ডুবোচর। শীত আসতেই পানি কমে গিয়ে নদীর বুকে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে চরগুলো। আর এতে বাধাগ্রস্ত হয় নৌযানের স্বাভাবিক চলাচল। যার বিকল্প এবারও ঘটেনি।
অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চের মাস্টার ও চালকরা জানান, নাব্যতা সংকটের কারণে প্রতিদিন নদীর বুকে আটকে যাচ্ছে কোনো না কোনো নৌযান। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয় বরিশালের স্লুইজখাল হিসেবে পরিচিত সাহেবের হাট চ্যানেল দিয়ে চলাচলকারী নৌযানগুলোকে। বরিশালের কীর্তনখোলা নদী থেকে লাহারহাট ফেরিঘাট হয়ে শ্রীপুর পর্যন্ত যেতে ৫-৬ জায়গায় প্রায়ই নৌযান আটকে যায়।
পাশাপাশি মেহেন্দিগঞ্জের পাতারহাটে ঘাটে লঞ্চ ভেরাতে অনেকসময় এমন সমস্যায় পড়তে হয়, সেসময় যাত্রীদের ট্রলারে করে ওঠা-নামা করাতে হয়। সমস্যা রয়েছে মজুচৌধুরীরহাট লঞ্চ ঘাট, বরিশালের লাহারহাট থেকে ভোলার ভেদুরিয়া রুটের কয়েকটি স্থানে।
ঢাকা বরিশাল রুটের হিজলা, লালখারাবাদ, চরমোনাই খেয়াঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে নাব্যতা সংকট। মাঝে মাঝে ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে ঢাকা-বরিশাল রুটের বিলাসবহুল নৌযানগুলোও।
এদিকে, শুধু যে যাত্রীবাহী নৌযান তা কিন্তু নয়, দুর্ভোগে পড়তে হয় মালবাহী জাহাজগুলোকেও।
যদিও নৌ পথ সচল রাখতে মাঝে মধ্যে নদীতে ড্রেজিং করে থাকে বিআইডব্লিউটিএ। তবে এ উদ্যোগ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য বলে মনে করেন লঞ্চ মালিক নেতারা।
অভ্যন্তরীণ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আজিজুল হক আক্কাস বলেন, নদীতে নাব্যতা সংকটের মূল কারণ হচ্ছে পর্যাপ্ত ড্রেজিং এর অভাব। নদীতে প্রতিবছর ড্রেজিং করা হয় না। ফলে নাব্যতা সংকটে বরিশাল থেকে দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল যেমন, ভোলা, কালাইয়া, লালমোহন, পাতারহাট, চরবিশ্বাস, চরমোন্তাজসহ বিভিন্ন স্থানে ২০টি রুটে লঞ্চ যাতায়াত ব্যাহত হয়।
বরিশালের স্লুইজখাল খ্যাত সাহেবেরহাট-টুঙ্গিবাড়িয়া খালে ২/৩ বছর আগে ড্রেজিং করা হয়েছে। ফলে খালে এবার এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, পানি কমে গেলে মালবাহী ট্রলার, জাহাজসহ প্রায় সব লঞ্চকেই ২০ কিলোমিটার পথ ঘুরে আসা যাওয়া করতে হয়।
ঢাকা বরিশাল রুটের লালখারাবাদ, হিজলাসহ বেশ কিছু জায়গায়ও নাব্যতা সংকট রয়েছে। লঞ্চ মালিকরা মাস্টার ও চালকদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে ড্রেজিং বিভাগ, বন্দর ও বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তাদের কাছে নাব্যতা সংকটের বিষয়ে বহুবার জানানো হয়েছে। কিন্তু কোন ফল আসেনি।
এদিকে, বিআইডব্লিউটিএ’র বরিশাল বন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিটি লঞ্চের মাস্টার ও চালকদের কাছ থেকে নদী পথের সমস্যার কথা শুনে লিখিতভাবে আমাদের জানানোর জন্য লঞ্চ মালিকদের অনুরোধ করা হলেও দুর্ভাগ্যক্রমে এরকম কোন তথ্য আজ অব্দি পাইনি।
তবে বিআইডব্লিউটিসি’র বরিশালের ম্যানেজারের কাছ থেকে একটি পত্র পাওয়ার প্রেক্ষিতে লাহারহাট খাল, লাহারহাট ভেদুরিয়া চ্যানেল, নৌ-বন্দর এলাকা, পদ্মাবতি ঘাট এলাকা, চরমোনাইঘাট এলাকা ড্রেজিং এর জন্য ঢাকায় চিঠি পাঠানো হয়েছে।
আশা করা যাচ্ছে, খুব শিগগিরই ড্রেজার চলে আসবে ডুবোচর খননের জন্য।
সর্বোপরি মাস্টার ও চালকদের কাছ থেকে জেনে প্রতি ১ মাস না হলেও ২ মাস পরে লঞ্চ মালিকদের সংশ্লিষ্ট দপ্তর বরাবর প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান তিনি। তাহলে এ সমস্যা অনেকটাই সমাধান করা যাবে বলে মনে করেন বন্দর কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৬
এমএস/আরএ