ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জীবন যুদ্ধে হার না মানা শফিক মিয়া

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৬
জীবন যুদ্ধে হার না মানা শফিক মিয়া মো. শফিক মিয়া / ছবি: রানা- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মো. শফিক মিয়ার (৫৬) তিন ছেলে এক মেয়ে। গত ১৪টি বছর ধরে নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এজন্য তাকে প্রতি রাতে টানা আট ঘণ্টা নৈশ প্রহরীর দায়িত্ব পালন করতে হয়।

ঢাকা: মো. শফিক মিয়ার (৫৬) তিন ছেলে এক মেয়ে। গত ১৪টি বছর ধরে নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

এজন্য তাকে প্রতি রাতে টানা আট ঘণ্টা নৈশ প্রহরীর দায়িত্ব পালন করতে হয়। বিনিময়ে মাস শেষে হাতে পান ৫৫০০ টাকা। ‌আর এটাই তার সর্বসাকুল্যে আয় এবং জীবনের একমাত্র অর্থ উপার্জনের মাধ্যম।
 
রোববার (২০ নভেম্বর) দিনগত রাতে রাজধানীর মহাখালীতে দায়িত্বরত অবস্থায় বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে উঠে আসে নিরাপত্তা প্রহরী শফিক মিয়ার জীবনের স্মৃতি বিজড়িত কিছু কথা।
 
শফিক মিয়া বলেন, কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার নয়াকান্দি গ্রামে তার বাড়ি। তিনি এলিট ফোর্স সিকিউরিটি কোম্পানিতে গত ১৪ বছর ধরে নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি করছেন। যখন চাকরিতে যোগদান করেন তখন বেতন পেতেন ১৭০০ টাকা। শুধু তাই নয়, তখন চালের কেজি ছিলো আট টাকা। আর এখন ৫০ টাকা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সবকিছুর পরিবর্তন হলেও হয়নি তার ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন।

তিনি আরও বলেন, মহাখালী ওভারব্রিজের নিচে ইস্টার্ণ ব্যাংকের বুথে নৈশ প্রহরীর দায়িত্বে থাকেন তিনি। সারারাত কাটে আল্লাহর জিকির আর নামাজ পড়ে। বয়সের ভারে সবসময় বসে থাকতেও ভালো লাগে না তাই মাঝেমধ্যে একটু হাঁটাচলাও করেন।

তবে নৈশ প্রহরীর দায়িত্ব পালনে ঝুঁকির কথাও জানালেন তিনি, একটি ব্যাংকের অর্থের সিকিউরিটি তথা নিরাপত্তা দিচ্ছেন তিনি। কিন্তু এটি রক্ষায় কোম্পানির কাছ থেকে দেওয়া হয়নি কোনো নিরাপত্তা সহায়ক যন্ত্র। যেটি দিয়ে তিনি যেমন একদিকে নিজেকে রক্ষা করবেন অন্যদিকে, রক্ষা করবেন ব্যাংকের সম্পদও। ফলে কোনো বিপদ ঘটলে চিৎকার করা ছাড়া আর কিছ‍ুই করার নেই তার।    

আক্ষেপ আর বুকের ভেতর চাপা কষ্ট নিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, এই কোম্পানির শুরু থেকে তিনি কাজ করছেন কিন্তু বেতন-ভাতার তেমন উন্নতি হয়নি।
 
নিরাপত্তা প্রহরী শফিক মিয়া আরও জানান, এই সিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকরি করে একমাত্র মেয়ে লাভলীকে বিয়ে দিয়েছেন। বড়ছেলে রাজীবকে ম্যাট্রিক পাশ করিয়েছেন, যিনি এখন বিয়ে করে সংসার গড়েছেন। এছাড়া বর্তমানে কিশোরগঞ্জে মেজোছেলে নাদিমকে মাস্টার্স ও ছোটছেলে নাঈমকে কলেজে পড়াচ্ছেন।

ফলে সন্তানদের নিয়ে গর্ব করতেও ভুল করলেন না। তাই শত কষ্টের মধ্যেও তিনি সুখের আশায় বুক বাঁধেন। মেজো ও ছোটছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। তারা পড়ালেখা শেষ করে ভালো চাকরি করবে আর গ্রামজুড়ে তার সুনাম বইবে!

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৬
এসজে/এসআরএস/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।