ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘লাইনের’ ঘূর্ণিপাকে চিকিৎসা ব্যাহত বিএসএমএমইউ-তে

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৬
‘লাইনের’ ঘূর্ণিপাকে চিকিৎসা ব্যাহত বিএসএমএমইউ-তে ছবি: জি এম মুজিবুর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে ডেমরা থেকে কোহিনূর বেগম যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গেটে পৌঁছান তখন ঘড়ির কাঁটায় সকাল আটটা।

ঢাকা: অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে ডেমরা থেকে কোহিনূর বেগম যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গেটে পৌঁছান তখন ঘড়ির কাঁটায় সকাল আটটা। এরপর টিকিট নেওয়া, চিকিৎসক দেখানো, চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বামীর দু’টি টেস্ট করানো শেষে যখন বাড়ি ফেরার জন্য আবার হাসপাতালের গেটে দাঁড়ালেন, তখন সূর্যদেবী ঘরে ফেরার পথে, বিকেল পাঁচটা।


 
ততক্ষণে ক্ষুধা আর ক্লান্তিতে কোহিনূর ও তার স্বামীকে কাহিলই লাগছিল। তবে আরো বেশি কাতর ছিলো তাদের শিশু কন্যাটি। সারাদিনে ঝালমুড়ি আর একটি আমড়া ছাড়া কিছুই জোটেনি তার কপালে।  

টিকিট নেওয়া থেকে শুরু করে সবশেষ টেস্ট এক্সরে করানো পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে কমপক্ষে কয়েকশ’ মানুষের পেছনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে তাকে। এরপরেও কোহিনূরদের কাঙ্ক্ষিত সেবা মেলেনি। রিপোর্ট নিয়ে ফের ডাক্তার দেখাতে রোগীকে নিয়ে পরের দিন আসতে হবে তাকে।

শুধু কোহিনূর নয়, বিএসএমএমইউ-তে সেবা নিতে আসা প্রতিটি রোগীর নিত্যসঙ্গী এই লম্বা লাইন। সকালে আসলে ফিরতে ফিরতে সেই সন্ধ্যা।
 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দিতে না পারার কারণেই প্রতিদিন এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি সামলাতে সরকারের আরো সহায়তা চেয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

দেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সেবার মান নিয়ে সামান্য কিছু অসন্তোষ থাকলেও বেশিরভাগ রোগীর মুখেই সন্তুষ্টির চিহ্ন। এছাড়া কম খরচের বিষয়টিও রয়েছে। আর এ কারণেই বিএসএমএমইউ-তে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের রোগীর চাপ থাকে সবসময়।
 
ঢাকা কলেজের ছাত্র জুয়েল আহমেদ জানান, সকাল ১০টার দিকে এসেও ডাক্তারের দেওয়া তিনটি টেস্ট বিকেল চারটায়ও শেষ করাতে পারেননি। চারটার দিকে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালেও তার সামনে অন্তত ৫০ জনের সিরিয়াল দেখা যায়।    
 
জুয়েল বলেন, আমাদের মতো ছাত্র, মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্তের জন্য ভরসার স্থান বিএসএমএমইউ। অথচ এখানে এসে অসুস্থ রোগী আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে প্রতিটা কাজে লম্বা লাইন ধরার জন্য। চিকিৎসাও ব্যাহত হয়। কর্তৃপক্ষের উচিত সেবার আওতা আরো বাড়ানো।
হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের ক্ষেত্রেও ভোগান্তির চিত্র একই। এ বিষয়ে মোজাম্মেল হোসেন নামের একজন ভুক্তভোগী বাংলানিউজকে বলেন, রোগ নির্ণয় করতে অসংখ্য টেস্ট করাতে হয়। আর লম্বা লাইন পেরিয়ে এসব টেস্ট করাতে করাতে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।

শিশুদের ক্ষেত্রে এ ভোগান্তি যেন কয়েকগুন। আবু নাসের নামে একজন বাবা বলেন, সকাল ন’টায় এসে ডাক্তার দেখাতেই দুপুর একটা বেজে যায়। ততক্ষণে আমার বাচ্চাটি আরো কাহিল হয়ে গেছে।

এদিকে হাসপাতাল সংলগ্ন ফার্মেসিটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে নতুন খোলা বর্হিবিভাগে নতুন দু’টি ফার্মেসি খোলা হয়েছে। এই দু’টি ২৪ ঘণ্টার খোলা রাখার নিয়ম থাকলেও বাস্তবতায় উল্টো চিত্র।

তবে শিগগিরই এ দু’টি ফার্মেসি ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল ফারুক।

লম্বা সিরিয়াল ও রোগীদের ভোগান্তি কমাতে হাসপাতালের সুবিধা বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, চিকিৎসা ও গবেষণার ক্ষেত্রে বিএসএমএমইউ বাংলাদেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। এর আরো উন্নতি করতে আমাদের সব পর্যায়ের কর্মকর্তার ঐকান্তিক প্রয়াস ও সরকারের সহায়তা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৬
জেপি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।