ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘সশস্ত্র বাহিনীকে কখনো ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার বানায়নি আ’লীগ’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৬
‘সশস্ত্র বাহিনীকে কখনো ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার বানায়নি আ’লীগ’ ছবি: সংগৃহীত (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা)

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, তার দল আওয়ামী লীগ কখনো সশস্ত্র বাহিনীকে ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার বানায়নি।

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, তার দল আওয়ামী লীগ কখনো সশস্ত্র বাহিনীকে ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার বানায়নি।

সোমবার (২১ নভেম্বর) ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। সশস্ত্র বাহিনীকে আমরা কখনও ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করিনি। ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বারবার ক্যু করে সশস্ত্র বাহিনীর শত শত অফিসার বা সৈনিকের হত্যাকাণ্ড ঘটাইনি।

“আমাদের সশস্ত্র বাহিনী যেন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। আধুনিক সমরাস্ত্রে সুসজ্জিত পারদর্শী সশস্ত্র বাহিনী হিসাবে গড়ে তুলতে চাই। ”

আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে সশস্ত্র বাহিনীর কল্যাণে কাজ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে সরকার কার্যকরী পরিকল্পনা গ্রহণের কথা জানান।  

তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা বাহিনীকে শক্তিশালী করতে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীকে দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন যুদ্ধসরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করার প্রয়াস অব্যহত রয়েছে। ফোর্সেস গোল ২০৩০ এর আওতায় সশস্ত্র বাহিনী পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কার্যক্রমসমূহ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আগের মেয়াদে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ়করণ এবং সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে নতুন পদাতিক ডিভিশন ও বেশ কিছু ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরকারের চলতি মেয়াদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, সরঞ্জামাদি ও জনবলের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করা হয়েছে।

“সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। শিগগির দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লেবুখালিতে একটিতে পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা এবং দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ব্রিগেড পর্যায়ে স্পেশাল ফোর্স গঠনের বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। ”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বহু আকাঙ্ক্ষিত দু’টি সাবমেরিন শিগগির নৌবাহিনীতে কমিশনিং হতে যাচ্ছে। নৌবাহিনী একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপান্তরিত হবে। যা আমাদের সামগ্রিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বিশেষ অবদান রাখবে।  

“নৌবাহিনীতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যুদ্ধজাহাজ, মেরিটাইম হেলিকপ্টার এবং মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট সংযুক্ত হয়েছে। নৌবাহিনী কার্যকরী ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীতে পরিণত হয়েছে। ”

বিমানবাহিনী প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, বিমানবাহিনীর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উন্নততর এবং যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ সুনিশ্চিত করতে সংযোজিত হয়েছে অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ বিমান ও হেলিকপ্টার। অবকাঠামোগত উন্নয়নও চলমান।

“বিমান বাহিনী আজ অত্যাধুনিক বিমান, আকাশ প্রতিরক্ষা র্যাডার, ক্ষেপণাস্ত্র, এমনকি ওভারহেলিং প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ। ”সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সশস্ত্র বাহিনীর যে সুদৃঢ় ভিত্তি রচনা করে গেছেন তারই ওপর দাঁড়িয়ে আজ আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্ব এবং কর্মদক্ষতার পরিচিতি দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত ও প্রশংসিত।

“আন্তর্জাতিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বিশ্ব দরবারে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে। ”

দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা, উদ্ধার তৎপরতা, রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো নির্মাণ, আশ্রয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা এবং জাটকা নিধন রোধসহ বিভিন্ন জাতি গঠনমূলক ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী আজ তাদের নানাবিধ জনসেবামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জনগণের নির্ভরতা অর্জন করছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সশস্ত্র বাহিনী পারদর্শিতা অর্জন করেছে।

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের চিকিৎসা ও আবাসনসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকারের পদক্ষেপও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত সশস্ত্র বাহিনী জাতির অহংকার উল্লেখ করে তিনি তাদের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন। এর আগে, অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী সেনাকুঞ্জে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌ বাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল আবু এসরার। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন।  

সেনাকুঞ্জে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, মসিউর রহমান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার প্রধান, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও কূটনীতিক এবং সামরিক ও বেসামরিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে যোগ দেয় বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলও।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবারও সশস্ত্র বাহিনীর অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। এ বিষয়ে ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, তিনি অসুস্থ থাকায় আসতে পারেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৬/আপডেট ১৭৪৪ ঘণ্টা
এমইউএম/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।