ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অনিশ্চয়তার পথে ঢাকা-সিলেট চার লেন প্রকল্প

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৬
অনিশ্চয়তার পথে ঢাকা-সিলেট চার লেন প্রকল্প .

অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে ঢাকা-সিলেট চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প। গত মাসে চীনা রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ সফরকালে প্রকল্পের অর্থায়নের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। তারও আগে করে রাখা হয় ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি। কিন্তু সেই চুক্তির দেড় মাস পরও কোনো অগ্রগতি নেই কাজের।

ঢাকা: অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে ঢাকা-সিলেট চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প। গত মাসে চীনা রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ সফরকালে প্রকল্পের অর্থায়নের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।

তারও আগে করে রাখা হয় ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি। কিন্তু সেই চুক্তির দেড় মাস পরও কোনো অগ্রগতি নেই কাজের। এ সময়ের মধ্যেই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দু’জন ঊর্ধ্বতন আমলার বিদেশ সফরের ফাঁকে চলে গেছে ‘কমার্শিয়াল এগ্রিমেন্ট’-এর মেয়াদ।

চলতি বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে চীনের সঙ্গে কমার্শিয়াল চুক্তিটি না হলে ২০১৮ সালের আগে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাবে না বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে সচিব এ এন এম ছিদ্দিক বলেন, এরকম কিছু আমি জানি না। চীনা দূতাবাস থেকে আমাকে জানায়নি। আর প্রকল্পের টেকনিক্যাল কমিটি যে কোনো মিটিং করেনি সেটা স্বীকার করে তিনি বলেন, প্রকল্পে ব্যয় নিয়ে চীন বিরাট ইনডিকেশন দিয়েছে। তার বিপরীতে আমাদের প্রতিটি আইটেম যাচাই করে দেখতে হবে প্রকৃত খরচ কত হবে। যাচাই করার সময়তো দিতেই হবে। আমাদের সব কাজ বাদ দিয়ে এটা করতে হবে- এমনটা করতে পারি না।

তবে এ প্রকল্পের ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তিকারী চীন সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান চায়না হার্বার ইঞ্জিনিয়ার মন্ত্রণালয়ে ‘কমার্শিয়াল এগ্রিমেন্ট’ করার কোনো সাড়া না পেয়ে গত ১৭ নভেম্বর চিঠি পর্যন্ত পাঠিয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে সেই চিঠির একটি কপি বাংলানিউজও পায়। যেখানে  তারা লিখেছে, এক মাস অপেক্ষা করেও মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ফিডব্যাক পাচ্ছে না তারা। সেই চিঠিতে দেখা যায়, তাদের সঙ্গে ১৬ অক্টোবর ‘কমার্শিয়াল এগ্রিমেন্ট’  করার কথা ছিলো।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ৯ অক্টোবর ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির পর এ প্রকল্প নিয়ে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় দু’টি কমিটি করে। একটি কারিগরি সংক্রান্ত অন্যটি ‘জি টু জি’ কমিটি।

এরপর এ নিয়ে আর কোনো বৈঠকও করেনি প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা সংস্থা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। তাগিদ নেই খোদ মন্ত্রণালয়েরও। যে কারণে আর মাত্র দু’দিন পার হলেই এ প্রকল্প আবার দীর্ঘসূত্রিতার জালে আটকা পড়বে।

২০১৮ সালের মধ্যে সড়কটি চারলেনে রূপান্তর করতে সরকার যেখানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সেখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে অন্যতম বড় এ উন্নয়ন প্রকল্প- এমনও মন্তব্য করেন সরকারঘনিষ্ঠ একজন উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চীন ২০১৭ সালে যেসব প্রকল্পে অর্থ দেবে তার কমার্শিয়াল চুক্তি ৩০ নভেম্বরের মধ্যে করতে হয়। শেষ মুহূর্তে এখন ৩০ নভেম্বর আসতে আর মাত্র ৮ দিন বাকি। এমন অবস্থায় গত দেড় মাস সময় হাতে পেয়েও এ প্রকল্প নিয়ে একবারও ভাবেনি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয়।

প্রকল্পের খোঁজ নিতে একাধিকবার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি।

সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব বিদেশ থেকে সবেমাত্র দেশে ফিরেছেন। আর এ প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট সরকারের অথনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব একের পর বিদেশ সফরে ব্যস্ত। এখনও তিনি বিদেশেই রয়েছেন।

দীর্ঘদিনের দাবির এ প্রকল্পে গতি আনতে ভূমিকা রেখেছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি অর্থনীতিবিদ ড. এম এ মোমেন।

এ নিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমলাদের অবহেলায় প্রকল্পটি স্ট্র্যাক হয়ে গেলো।

সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কমার্শিয়াল চুক্তি হওয়ার আগে মন্ত্রিসভা ও ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদন লাগে। টেকনিক্যাল কমিটি ও জিটুজি কমিটির প্রতিবেদনের আলোকেই এটি অনুমোদিত হয়। কিন্তু বৈঠক প্রতিবেদন অনুমোদন দূরের কথা, এ দু’টি কমিটিতে কারা আছেন সেটাই জানেন না।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকা সিলেট তিন থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টায় যাতায়াত করা যাবে। নারায়ণগঞ্জের কাচপুর সেতু থেকে সিলেট শহর পর্যন্ত ২২৬ কিলোমিটার দুই লেন সড়ককে চার লেনে উন্নীত করাই ছিলো এ প্রকল্পের কাজ।

 বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৬
এসএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।