ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে অগ্নিদগ্ধ কন্যা শিশু শ্রমিকরা

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৬
যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে অগ্নিদগ্ধ কন্যা শিশু শ্রমিকরা ছবি: কা‌শেম হারুন- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

১৪ বছর বয়সী মুক্তি আক্তারের ডান হাতটা পুরোটা ব্যান্ডেজে। বাম হাতটাও কব্জি বাদে পুরোটাই ব্যান্ডেজ। মুখের বিভিন্নস্থানে দেওয়া হয়েছে সিল্ক...

ঢাকা: ১৪ বছর বয়সী মুক্তি আক্তারের ডান হাতটা পুরোটা ব্যান্ডেজে। বাম হাতটাও কব্জি বাদে পুরোটাই ব্যান্ডেজ।

মুখের বিভিন্নস্থানে দেওয়া হয়েছে সিল্ক ক্রিম। যন্ত্রণায় বিকৃত হয়ে গিয়েছে ছোট মুখটি, তবে সেখানে নেই কান্না! শুধু আছে যন্ত্রণায় কাতরানো।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের অবজারভেশন ওয়ার্ডের বিছানায় শুয়ে আছেন মুক্তি। পাশে বসে রয়েছেন মা রত্না।

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থানার জোরালি বাড়ির শিশু মুক্তির এই বছর পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা। গরীবের ঘরে পড়াশোনায় বেশ কয়েকবার ঝড়ে পড়া। আবারও ক্লাসে ফেরা। কিন্তু পেটের তাগিদে আবারও পড়াশোনা ছেড়ে যেতে হয়। এই যেমন গত অক্টোবরের ২৮ তারিখে বাবা আর মায়ের সঙ্গে বগুড়া ছেড়ে কাজের সন্ধানে ঢাকা চলে আসতে হয় মুক্তিকে। কয়েকমাস কাজ করে আবার বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। তখন আবার গ্রামের মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার কথা, কিন্তু সেটি কি হবে?
বাবা পুরোপুরি সুস্থ নন। এরপরও কাজ নিলেন শহরের ময়লা পরিষ্কারের আর মা ও মেয়ে কাজ নিলেন আশুলিয়ার ফ্যাক্টরিতে। ৫ হাজার টাকা করে দুজনের রুজি হওয়ার কথা ছিল ১০ হাজার টাকা। জিরানিবাজারে আড়াই হাজার টাকায় একটি রুম ভাড়া তাদের। দুপচাঁচিয়ার আরও অনেকেই এই ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। তাদের মাধ্যমেই পরিচয় এখানে।

প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) সকাল থেকে কাজ শুরু করেন মা ও মেয়ে। মুক্তি লাইটারের গায়ে শেষবারের মতো স্টিল লাগাতেন এবং মা রত্না লাইটারের আগুন পরীক্ষা করতেন ও কমিয়ে রাখতেন।

আসরের নামাজের পরপর দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় আরেকটা রুমে লাইটারের ওয়াল্টার খুলতে গিয়েছিলেন রত্না। মুহুর্তেই এক বিস্ফোরণ, চারিদিকে সব ঝলসে গেলো।

মুক্তির শরীরের ২০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। আর তার মতোই আরও কয়েকজন শিশুরও শরীর পুড়েছে আশুলিয়ার অগ্নিকাণ্ডে। সবচেয়ে বড় অংশ পুড়েছে ১৮ বছরের রকির; এই মেয়ের শরীরের ৭০ শতাংশই পুড়ে গিয়েছে।

আঠারো বছরের মধ্যে অন্য শিশুরা হলো, ১৩ বছরের আখির শরীরের ৩৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে, ১৬ বছরের নাজমার ২৫ শতাংশ, ১৭ বছরের লাভলীর ৩০ শতাংশ, ১৬ বছরের হাফিজার ২০ শতাংশ, ১৫ বছরের খোদেজার ১৬ শতাংশ এবং ১৬ বছরের সোনিয়ার শরীরের ২২ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।

অগ্নিদগ্ধদের বার্ন ইউনিটের পোস্ট অপারেটিভ কেয়ার, আইসিইউ, এইচডিইউ এবং অবজারভেশন বিভাগে ভর্তি রাখা হয়েছে। শিশু শ্রমিক হিসেবে এই মেয়েরা সবাই ওই ফ্যাক্টরিতে কাজ করতো।

বার্ন ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম বলেন, সবার শ্বাসনালীতে বার্ন হয়েছে। ফলে অবস্থা সবারই গুরুতর। সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ১৭ শতাংশ পর্যন্ত পুড়ে গেছে।

আরও পড়ুন:
** আর্তনাদ বার্ন ইউনিটে
** ‘আশুলিয়ায় দগ্ধদের সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক’
** আশুলিয়ায় দগ্ধ ২০ জন ঢামেকের বার্ন ইউনিটে
** আশুলিয়ায় দগ্ধদের মধ্যে ৫ জন এনাম মেডিকেলে ভর্তি
** আশুলিয়ায় দগ্ধদের চিকিৎসার্থে ১ লাখ টাকা অনুদান
** আশুলিয়ায় গ্যাস লাইটার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে
** আশুলিয়ায় গ্যাস লাইটার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহত ৩৯

বাংলাদেশ সময়: ০৪৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
এমএন/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।