ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

তাজরীন ট্র্যাজেডির ৪ বছর

অথৈ জলে মোমেনা-মমতাজরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
অথৈ জলে মোমেনা-মমতাজরা

‘টাকার অভাবে মেয়ে জান্নাতের পড়ালেখা বন্ধ কইরা দিছি। কোনো রকমে ছেলে রাসেলটারে পড়াইতাছি। খায়া না খায়া দিন কাটতাছে’ বলেই কেঁদে ওঠেন মোমেনা বেগম।

ঢাকা: ‘টাকার অভাবে মেয়ে জান্নাতের পড়ালেখা বন্ধ কইরা দিছি। কোনো রকমে ছেলে রাসেলটারে পড়াইতাছি।

খায়া না খায়া দিন কাটতাছে’ বলেই কেঁদে ওঠেন মোমেনা বেগম।

অথচ এই মোমেনাই চার বছর আগে তাজরীন ফ্যাশনে অপারেটরের কাজ করে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতেন। সে সময় যেখানে সকাল হলেই কারখানায় যেতেন, এখন প্রায় অচল পা নিয়ে বসে থাকতে হয় ঘরের চৌকাঠে।

বিভীষিকাময় সেই ২৪ নভেম্বরের রাতে জীবন বাঁচাতে তাজরীন ফ্যাশনের পঞ্চমতলা থেকে লাফিয়ে পড়েন মোমেনা। পা দু’টি প্রায় থেঁতলে গিয়েছিলো। এখনো ওষুধের টাকা জোগাতে পারেন না।

গত চার বছরে এক টাকাও সহায়তা পাননি কারো কাছ থেকে। ভবিষ্যত শব্দটি শুনতেই একরাশ কালো মেঘ চোখে পড়ে মোমেনার। অথই জলে যেন কূল খুঁজে পান না তিনি।

মোমেনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘জামাইয়ের চায়ের দোকান আর আমার কারখানার কাজের টাকায় সংসার ভালোই চলতাছিলো। কিন্তু কারখানায় আগুন লাগার পর থেইকা ঘরে বইসা আছি। টাকার অভাবে মাইয়ার পড়ালেখা বন্ধ। জামাইয়ের একটা ছোট চায়ের টং দোকানের আয়ের পুরা সংসার চালাইতে হয়। ছেলেটা কেলাস নাইনে পড়ে। সামনে তার পড়ালেখা আর চাইতে পারমু কি-না, জানি না’।

আর এক অসহায় মা মমতাজ। তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের সময় তৃতীয়তলায় কাজ করছিলেন তিনি। আগুন লাগার পর মালিকপক্ষ গেটে তালা দিয়ে দিলে প্রাণ রক্ষায় তিনতলার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েন মমতাজ। বুকের হাড় ভেঙে যায়। আর তাই এখনো কোনো ভারি কাজ করতে পারেন না মমতাজ। পাননি এক টাকা ক্ষতিপূরণও।

মেস বাড়িতে রান্না করে পান মাসে হাজার টাকা। সংসার চলবে কি করে, সেটা ভেবে দিন যায় না মমতাজের।

মমতাজ বেগম বলেন, ‘আগে কারখানায় কাজ কইরা পাইতাম ৫ হাজার টাকা। আর অহন মেস বাড়িতে রান্না কইরা পাই হাজার টাকা। এই দিয়াতো আমার ওষুধের খরচই ওঠে না। দিন চলবো ক্যামনে। ছোট দুই মেয়ের লেহাপড়া কোনোদিন করাইতে পারমু বইলা মনে হয় না’।

মোমেনা, মমতাজদের মতো তাজরীনের অসংখ্য শ্রমিক ক্ষতিপূরণ না পেয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে হাটছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘তাজরীনের অগ্নিকাণ্ডে আহত বেশিরভাগ শ্রমিক ক্ষতিপূরণ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মালিকপক্ষ থেকে তারা কোনো সহায়তা পাননি। মালিকপক্ষতো ক্ষতিপূরণ না দিয়েই বেঁচে গেছে। তবে সরকারের শ্রম কল্যাণ তহবিল থেকে সহায়তা করা উচিত এসব আহত শ্রমিকদের’।

আহত শ্রমিকরা যথার্থ প্রমাণ নিয়ে আবেদন করলে সহায়তা দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন শ্রম কল্যাণ তহবিলের মহাপরিচালক ম আ কাশেম মাসুদ।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘শ্রম কল্যাণ তহবিল শ্রমিকদের জন্যই। এখন আমাদের অবস্থানও আগের চেয়ে বেশ শক্ত। তাজরীন ফ্যাশন অগ্নিকাণ্ডে আহত শ্রমিকরা সঠিক প্রমাণ নিয়ে এলে অবশ্যই তাদের সহায়তা দেওয়া হবে। তবে যথার্থ প্রমাণ অবশ্যই লাগবে’।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় তাজরীন ফ্যাশন পোশাক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেদিন কারখানার ২য় তলা থেকে ৫ম তলা পর্যন্ত এক হাজার শ্রমিক কাজ করছিলেন। কারখানার নিচতলার গুদামে আগুন লেগে তা দ্রুত ওপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে পুড়ে মারা যান ১১৩ জন শ্রমিক, আহত হন আরও তিন শতাধিক।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
ইউএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।