ঢাকা: ‘জীবনের শুরুতেই হোঁচট খায় রকি। নিজের পায়ে দাঁড়াতে কাজের সন্ধানে ঢাকার আশুলিয়ায় চলে আসে।
আশুলিয়ার গ্যাস লাইটার কারখানায় অগ্নিদগ্ধ রোকসানা আক্তার রকির (১৮) বড় ভাই জুলফিকার রহমান জনি আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন। ৭০ শতাংশ বার্ন নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন কারখানাটির নারী শ্রমিক রকি।
ভারাক্রান্ত গলায় জনি জানান, আইসিইউতে কাতরাচ্ছেন আর কেবলই মাকে এনে দিতে বলছেন রকি।
দগ্ধ রকির বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার বালিয়াদিঘি গ্রামের মৃত তোরাব আলীর মেয়ে। বড় ভাই জনি জানান, তাদের মা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। তাকে খবর দেওয়া হয়েছে। তিনি আসছেন।
জনি বলেন, ‘খুব অল্প বয়সে রকি নিজেই প্রেম করে বিয়ে করে। দুই বছরের মাথায় তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। জীবনের শুরুতেই হোঁচট খায়। খুব ছোট থাকতেই আমাদের বাবা
মারা যান। তাই বাবার আদরও পায়নি’।
একটু থেমে জনি বলতে থাকেন, ‘আমরা দুই বোন, তিন ভাই। সবার ছোট আমাদের আদরের বোন রকি। আমাদের মা অনেক কষ্ট করে আমাদের বড় করেছেন’।
জনি বলেন, ‘নিজের পায়ে দাঁড়াতে ও মাকে ভালো রাখতেই কাজের সন্ধানে ঢাকায় চলে আসে রকি। এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ৪/৫ মাস আগে আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় গিয়ে কালার ম্যাচ বিডি লি. এ চাকরি নেয়’।
দগ্ধ রকির ভাই জনি উত্তরার একটি ছোট কোম্পানিতে চাকরি করেন। মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) বোনের দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঢামেকে ছুটে আসেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘বোন আমার গতকাল থেকে সারাদিন কিছুই খায়নি। আজ বিকালে হঠাৎ বলে, আমি আংগুর ও আপেল খাবো। সেগুলো এনে হাত দিয়ে চিপে রস করেও দিলাম। এক ফোটাও খেতে পারলো না’।
‘ভাইরে আমার খুবই কষ্ট হইতাছে। আমারে মার কাছে লইয়া চলো, আমি মারে দেখুম। আমি অনেক অন্যায় করেছি। ভাইগো, তোমরা আমাকে মাফ করে দিও- এভাবেই বিড়বিড় করে বলতে থাকে রকি’।
ভাই জনি বলেন, ‘বোন আমার মাকে দেখতে চাইছে। তাই মাকে সংবাদ দেওয়া হয়েছে’।
তিনি বলেন, ‘শুনেছি আমার বোন বলে বাঁচবে না। আপনারা সবাই দোয়া করেন আমার বোনের জন্য’।
মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় কালার ম্যাচ বিডি লিমিটেড নামে ওই কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধসহ মোট ৩৯ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২০ জন নারী শ্রমিককে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ও বাকিদের এনাম মেডিকেলসহ স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
এজেডএস/ এএসআর