ঢাকা: সাক্ষী না আসায় বিলম্বিত হচ্ছে তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার বিচার।
চার্জশিটভূক্ত ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে গত ১৪ মাসে মাত্র ৫ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
আদালতের নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ১০ জানুয়ারি মামলার বাদী আশুলিয়া থানার এসআই খায়রুল ইসলাম ও সঙ্গীয় ফোর্স এসআই শাহজালাল মিয়া আদালতে সাক্ষ্য দেন।
আর তাজরীন ফ্যাশনস্ ভবনের পার্শ্ববর্তী ভবনের মালিক সোনা মিয়া মণ্ডল, তাজরীন ফ্যাশনের সুইং অপারেটর মাহে আলম ও অপারেটর লাইলি বেগম সাক্ষ্য দিয়েছেন গত ১০ এপ্রিল। এরপর গত সাত মাসে কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি।
হাজির হতে প্রতিটি ধার্য তারিখে সাক্ষীদের প্রতি অজামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরেযানা জারি করছেন আদালত।
নথিতে দেখা গেছে, বর্তমানে চার্জশিটের ৬ নম্বর সাক্ষী মঞ্জুর আলম, ৮ নম্বর সাক্ষী শাহানা বেগম, ১০ নম্বর সাক্ষী চায়না বেগম, ১১ নম্বর সাক্ষী আবু বকর ও ১২ নম্বর সাক্ষী রাকিব হাসানের বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি আছে। সাক্ষীরা সবাই পুড়ে যাওয়া তাজরীন ফ্যাশনে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু তাদের আদালতে হাজির করা যাচ্ছে না।
ঢাকার ১ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এসএম সাইফুল ইসলামের আদালতে মামলাটি বিচারাধীন আছে।
সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কাজী শাহানারা ইয়াসমিন বাংলানিউজকে বলেন, চার্জশিটের ১০৪ জন সাক্ষীর অধিকাংশই ঘটনার সময় তাজরীন ফ্যাশনে কর্মরত ছিলেন। বেশিরভাগ সাক্ষীর ঠিকানা দেওয়া আছে তাজরীন ফ্যাশনস আর তৎকালীন বর্তমান ঠিকানা। কিন্তু কারখানাটি বর্তমানে বন্ধ। শ্রমিকরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ নিয়েছেন। বাসা পরিবর্তন করেছেন। ফলে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেও সাক্ষীদের পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের নামে জারি করা সমন ও ওয়ারেন্ট ফেরত আসছে। আর সাক্ষী না আসায় মামলার বিচার বিলম্বিত হচ্ছে।
২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাজরীন ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক একেএম মহশীন উজ্জামান খাঁন। এর আগে মামলাটির তদন্ত করেন আশুলিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মোস্তফা কামাল ও সিআইডি পুলিশের সিনিয়র এএসপি মনসুর আলী মণ্ডল।
চার্জশিটভূক্ত অন্য ১২ আসামি হলেন- দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, কোয়ালিটি ম্যানেজার শহিদুজ্জামান দুলাল, প্রডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জু, প্রশাসনিক কর্মকর্তা দুলাল, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু, সিকিউরিটি সুপারভাইজার আল আমিন, ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনারুল, স্টোর ইনচার্জ আল আমিন ও লোডার শামীম মিয়া।
আসামিদের সবার বিরুদ্ধে অপরাধজনক নরহত্যা (ধারা- ৩০৪ দণ্ডবিধি) ও অবহেলার কারণে মৃত্যুর (ধারা- ৩০৪ক দণ্ডবিধি) অভিযোগ আনা হয়।
অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস, কাটিং লোডার সুজন হাওলাদার ও সোহেল রানাকে মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
ভবনটির নকশায় ত্রুটি ও জরুরি নির্গমনের পথ না থাকায় এবং আগুন লাগার পর শ্রমিকরা বাইরে বের হতে চাইলে নিরাপত্তা কর্মীরা আগুনটিকে অগ্নি নির্বাপন মহড়া বলে শ্রমিকদের কাজে ফেরত পাঠিয়ে কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দেওয়ায় এ ঘটনা ঘটে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।
১৩ জন আসামির মধ্যে ১১ জনই জামিন পান। দুই আসামি কোয়ালিটি ম্যানেজার শহিদুজ্জামান দুলাল ও প্রডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জু মামলার শুরু থেকেই পলাতক। অন্য দুই আসামি লোডার শামীম মিয়া ও সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনারুল জামিনে গিয়ে পলাতক হওয়ায় গত ১৩ নভেম্বর তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নি ঘটনায় ১১৩ জন শ্রমিক জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। আহত হন ১০৪ জন শ্রমিক।
গার্মেন্টসটিতে এক হাজার ১শ’ ৬৩ জন শ্রমিক কাজ করতেন। দুর্ঘটনার সময় ৯৮৪ জন শ্রমিক সেখানে কর্মরত ছিলেন।
নিহত ১১৩ জনের মধ্যে তৃতীয় তলায় ৬৯ জন, চতুর্থ তলায় ২১ জন, পঞ্চম তলায় ১০ জন এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন হাসপাতালে মারা যান ১৩ জন।
মরদেহ শনাক্ত হওয়ায় ৫৮ জনকে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাকি ৫৫ জনের মরদেহ অশনাক্ত অবস্থায় জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৬
এমআই/এএসআর
আরও পড়ুন
** পোশাক শিল্পের ইতিহাসে কালো অধ্যায় ‘তাজরীন’