পার্বতীপুর (দিনাজপুর): দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার অ্যাডভোকেট আব্দুল হাই ও ডেপুটি কমান্ডার সিদ্দিক হোসেনকে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে স্ব স্ব পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
দিনাজপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সিদ্দিক গজনবী স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে তাদের দু’জনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে সহকারী কমান্ডার (অর্থ) সেলিম উদ্দিন সরকারকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
২০ নভেম্বর (রোববার) স্বাক্ষরিত চিঠিটি বুধবার (২৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় অভিযুক্তদের হাতে এসে পৌঁছায়।
জানা গেছে, অ্যাডভোকেট আব্দুল হাই ও সিদ্দিক হোসেন ছয় বছর ধরে পার্বতীপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচিত কমান্ডার ও ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
সর্বশেষ গত ২০১৪ সালের ৪ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তারা দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মেয়াদকাল শেষ হওয়ার কথা।
কয়েক বছর ধরে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শুরু হলে পার্বতীপুর উপজেলায় তালিকাভুক্ত ৬৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা ২-৩টি উপদলে বিভক্ত হন। এক পক্ষ অপর পক্ষকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকার বলে চিহ্নিত করতে তৎপর হয়ে ওঠেন।
এক বছর আগে ক্ষমতাশীন দলের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে তারা মুক্তিযোদ্ধা নন প্রমাণিত হলে গ্রহণ করা ভাতা ফেরত দেবেন বলে “মুচলেকা” দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলনে তালিকাভুক্ত হন। সেময় দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে।
গত আগস্ট মাসে সরকারি দলের সমর্থক প্রায় দেড়শ’ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বর্তমান কমান্ডার ও ডেপুটি কমান্ডারের বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকার তহবিল তসরুফসহ নানা অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দিনাজপুর জেলা কমান্ড, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন।
১৯ আগস্ট তাদের একদল সমর্থক পার্বতীপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেন। তখন থেকে পার্বতীপুরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যক্রম অচল হয়ে রয়েছে।
গত ১০ অক্টোবর এসব ঘটনার সরেজমিন তদন্ত করতে দিনাজপুর জেলা কমান্ডার সিদ্দিক গজনবীর নেতৃত্বে চার সদস্যের তদন্ত দল পার্বতীপুরে আসেন। এ সময় প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা চালিয়ে জেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নেতৃবৃন্দকে লাঞ্ছিত করেন এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করেন। এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াছ আলী বাদী হয়ে ২৭ অক্টোবর দিনাজপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় মুক্তিযোদ্ধা রিয়াজ মাহমুদ, মুক্তিযোদ্ধা সেলিম উদ্দিন সরকার, মুক্তিযোদ্ধা সহিদুল হক, মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর হোসেন ও সরকারি দলের কয়েকজন নেতাকর্মীসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়।
দিনাজপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সিদ্দিক গজনবী বুধবার (২৩ নভেম্বর) রাতে বাংলানিউজকে জানান, প্রাথমিক তদন্তে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অনেক ত্রুটি পাওয়া গেছে। এ কারণে তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে আরেক দফা তদন্ত করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে, বরখাস্ত হওয়া পার্বতীপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অ্যাডভোকেট আব্দুল হাই ও ডেপুটি কমান্ডার সিদ্দিক হোসেন তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে ভিত্তিহীন এবং জেলা কমান্ডারের সিদ্ধান্তকে এখতিয়ার বহির্ভূত বলে দাবি করে জানান, এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা আদালতের আশ্রয় নেবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৬
আরএ