খুলনা: ভবনের কলাম এবং ভিমগুলো ভেঙে রড বের হয়ে গেছে, ছাদের ঢালাই ভেঙে রড ঝুলে পড়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে রডগুলোর টেম্পার।
এমন জরাজীর্ণ ভবনে চলছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সোনাডাঙ্গা মডেল থানার কার্যক্রম। জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে সার্বক্ষণিকভাবে যে বাহিনী দায়িত্ব পালন করে থাকে, জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ও আতংকের মধ্যে থানা ভবনে কাজ করছে সেই পুলিশ বাহিনীই। ভূমিকম্প কিংবা প্রাকৃতিক দূর্যোগে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে এ থানায়।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), উপ-পরিদর্শক (এসআই), সহকারী উপ-পরিদর্শকসহ (এএসআই) প্রায় অর্ধশতাধিক পুলিশ থানা ভবনে বসে কিংবা অবস্থান করে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি ১৪ থেকে ১৫ জন পুলিশ সদস্য দু’তলায় পুলিশ ব্যারাকে রাত্রিযাপন করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৯০ দশকে অত্যন্ত নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রি দিয়ে তৈরি করা থানা ভবনটি এখন ঝঁকিপূর্ণ। ভবনের ছাদের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি পড়ছে কর্মকর্তাদের অফিস কক্ষ, অস্ত্রাগার ও ব্যারাকে। ঝরঝর করে বালু পড়ে মাথার উপর। দিন-রাত জনগণের নিরাপত্তা দিয়ে একটু শান্তিতেও ব্যারাকে ঘুমাতে পারছেন না তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, থানা ভবনের সামনের অংশ দেখলে মনে হবে নতুন ভবন। কিন্তু এর বাস্তব অবস্থা ঠিক ‘বাহিরে ফিটফাট আর ভেতরে সদরঘাট’। তিনতলা বিশিষ্ট এ মডেল থানা ভবনে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষেই বড় বড় ফাটল। এছাড়া সার্ভিস ডেস্ক, অস্ত্রাগার, ওয়ারল্যাস অপারেটর কক্ষ, ব্যারাক ও অফিসাররা যেসব কক্ষে বসে কাজ করছেন সেখানের ছাদের ঢালাই ভেঙে রড ঝুলে পড়েছে।
থানা মসজিদের ইমাম শাহ আলম জানান, ১৯৯৬ সালে ১ তলা ভবন দিয়ে সোনাডাঙ্গা থানার যাত্রা শুরু হয়। ৯৭ সালে দোতলা করা হয়। ২০০৬ সালে তিন তলা করা হয়। থানার যাত্রার প্রথম থেকেই তিনি এখানে আছেন। থানা নির্মাণের পরই ভবনটির ড্যামেজ শুরু হয়।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মামুন আক্তার বলেন, কিছুদিন আগে থানায় কর্মরত অবস্থায় আমার কাছেই ছাদ ধসে ইট সুরকি খুলে পড়ে। সামান্যর জন্য মাথায় পরেনি। মাথায় পড়লে হয়তো বিপদ ঘটে যেতো।
পুলিশের দুর্ভোগ দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, ব্যবহারের অনুপোযোগী ভবনে দিনের পর দিন চলছে থানার কার্যক্রম ও পুলিশের বসবাস। ভবনের অবস্থা এতোই নাজুক যে কোনো সময় ভবন ভেঙে জীবনহানি ঘটতে পারে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
থানার সেকেন্ড অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইব্রাহিম হোসেন সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা এখানে কাজ করছি। জানি না কখন দুর্ঘটনা ঘটে যায়।
তিনি জানান, গণপূর্ত-২ এ ভবনটি ৯০সালে কাজ শুরু করে কয়েক ধাপে শেষ করা হয়। ২০০৭ সালে থানাটি মডেল থানায় রূপান্তর করা হয়। অত্যন্ত নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে থানা ভবন তৈরি করায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার শেখ জাহিদুল ইসলামসহ নির্মাণ কাজের সঙ্গে যারা ছিলো তাদের বিরুদ্ধে ৩০/৮/১৯৯৯ সালে প্রতারণা মামলা করা হয়। মামলাটি চলমান রয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝি বাংলানিউজকে বলেন, জরাজীর্ণ ভবনটির কথা তুলে ধরে গণপূর্ত বিভাগকে বিষয়টি অবহিত করে বুধবার (২৩ নভেম্বর) চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি তারা ব্যবস্থা নিবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৬
এমআরএম/ওএইচ/এসএইচ