ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ ১৮’র নিচে বিয়ে দেওয়া যাবে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৬
‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ ১৮’র নিচে বিয়ে দেওয়া যাবে

ছেলেদের ২১ এবং মেয়েদের জন্য ১৮ বছর বয়সের সীমারেখা রাখলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ আদালতের নির্দেশনা মেনে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের সর্বোত্তম স্বার্থে বিয়ে দেওয়া বিধান রেখে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৬’ এর চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

ঢাকা: ছেলেদের ২১ এবং মেয়েদের জন্য ১৮ বছর বয়সের সীমারেখা রাখলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ আদালতের নির্দেশনা মেনে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের সর্বোত্তম স্বার্থে বিয়ে দেওয়া বিধান রেখে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৬’ এর চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

 
 
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এতথ্য জানান।
 
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব বলেন, পুরুষের বিয়ের ক্ষেত্রে ২১ এবং নারীর ক্ষেত্রে ১৮ বছরের নিচে বিয়ে দেওয়া যাবে না। ২১ বছর পূর্ণ করেনি এমন কোনো পুরুষ এবং ১৮ বছর পূর্ণ করেনি এমন কোনো নারী অপ্রাপ্ত বয়সের মধ্যে পড়বেন। বা উভয়পক্ষ অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলে তা বাল্যবিবাহ হিসেবে গণ্য হবে।
 
তবে ক্ষেত্র বিশেষে মেয়েদের বিয়ের বয়সের এই আইন প্রযোজ্য হবে না বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
 
আইনের ১৯ ধারায় বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব বলেন, এই আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে আদালত কর্তৃক নির্দেশনাক্রমে এবং মাতা-পিতার সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হলে তা এই আইনের অপরাধ বলে গণ্য হবে না।
 
‘এটা একটা ডিপারচার রাখা হয়েছে, স্পেশাল কেইস। ’
 
তিনি বলেন, ১৮ বছরের নিচে নারীর বিয়ে হলে অপরাধ হলেও এই স্পেশাল কেইসের ক্ষেত্রে অপরাধ হবে না। কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে, যেমন ধরুন আনমেরিড মাদার কিন্তু তার বাচ্চা আছে। এরকম কেইস যদি হয়, এসব ক্ষেত্রে তাকে প্রটেকশন দেওয়ার জন্য এই বিধান করা হয়েছে।
 
এই বিশেষ বিধানযুক্ত এবং তা আদালত কর্তৃক নির্ধারণ করে আইনের নতুন পরিবর্তন আনা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব বলেন, বিশেষ প্রেক্ষাপটের আর কোনো সংজ্ঞা নেই, তবে এটা আদালত নির্ধারণ করবে। বিশেষ প্রেক্ষাপটে বয়সের কোনো সীমা নেই।  
 
সচিব বলেন, ১৯৩৪ সালের চাইল্ড ম্যারেজ আইনের পুর্নবিন্যাস করে আইনটি বাংলায় করা হয়েছে। ২১ ও ১৮ বছরের নিচে বিয়ে হলে শাস্তির বিধান সন্নিবেশিত হয়েছে আইনে।
 
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব বলেন, বাল্যবিবাহের ওপর আদালত সহ-উদ্যোগে বা কোনো ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে।
 
বাল্যবিবাহের শাস্তি হিসেবে বলা হয়েছে, অনধিক ৬ মাস করাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বাল্যবিবাহ সম্পর্কে কেউ মিথ্যা অভিযোগ করলে তার বিরুদ্ধে অনধিক ৬ মাস কারাদণ্ড বা ৩০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
 
বাল্যবিবাহের ছেলে-মেয়ের শাস্তি অনধিক ১৫ দিনের আটকাদেশ বা অনধিক ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
 
প্রাপ্ত বয়স্ক কোনো নারী বা পুরুষ বাল্যবিবাহ করলে তার জন্য বড় শাস্তি রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব বলেন, তার জন্য অনধিক ২ বছর কারাদণ্ড বা ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড হবে।
 
বাল্যবিবাহের সঙ্গে পিতা-মাতাসহ সহযোগীরা সংযুক্ত থাকলে সর্বনিম্ন ৬ মাস থেকে অনধিক ২ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
 
বাল্যবিবাহ বন্ধের উদ্যোগী হওয়ার শর্তে বাল্যবিবাহ থেকে অব্যাহতি পাওয়া যাবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব।  
বাল্যবিবাহের নিবন্ধনের জন্য নিবন্ধকের শাস্তি ও লাইসেন্স বাতিল হবে। কাজী বা নিবন্ধকের অনধিক ২ বছর কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
 
বয়সের দলিল জন্ম নিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, প্রাথমিক স্কুল সনদ, জেএসসি-জেডিসি সনদ বা পাসপোর্ট হিসেবে গণ্য হবে।
 
বাল্যবিবাহের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ক্ষতিগ্রস্তপক্ষকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাবে। অর্থাৎ যে অর্থদণ্ড আরোপিত হয় তা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে দেওয়া যাবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব।
 
এই আইন লঙ্ঘন করলে অপরাধের বিচার অন্য বিচারের মতোই হবে। মোবাইল কোর্ট এই আইনে পরিচালিত হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৬/আপডেট: ১৬৪০ ঘণ্টা
এমআইএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।