ঢাকা: ‘মা আমাকে কোলে নাও, একটু আদর করো, একটু জড়িয়ে ধরো, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে’- মৃত্যুর আগে এমনটাই ছিলো আশুলিয়ার গ্যাস লাইটার কারখানায় অগ্নিদগ্ধ রোকসানা আক্তার রকির (১৮) শেষ কথা, শেষ আকুতি। মেয়ের শোকে বিলাপ করতে করতে এ কথা জানিয়েছেন তার মা জুলেখা বেগম।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) সকাল সাড়ে দশটার দিকে নারী শ্রমিক রকির মৃত্যুর পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের নিচতলায় আর্তনাদ করছিলেন তিনি।
‘আমার সোনা ময়না, তোমাগো মতোই সুন্দর ছিলো, আমার সোনা ময়নার কি হইলো, একটু পানিও খাইতে পারল না। ওর বড় বোনের (তাসলিমা) কাছে পানি চাইলো, চামচ দিয়া পানি খাওয়াইতে গেলে গলা থেকে পানি বের হইয়া যায়’- বলে বলে বিলাপ করছিলেন জুলেখা বেগম।
মায়ের পাশেই ছোট বোন হারানোর শোকে বাকরুদ্ধ অবস্থায় মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছিলেন রকির বড় বোন তাসলিমা।
এর আগে মাকে দেখার প্রতীক্ষায় ছিলেন দগ্ধ রকি। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার ভোররাতে গ্রামের বাড়ি থেকে হাসপাতালে আসেন তার মা জুলেখা বেগম। মেয়েকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে মেয়ের শেষ কথাও হয়।
শেষ কথা বলার কয়েক ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে দশটায় বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে মা ও ভাই-বোনের সামনেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রকি।
নিহত রকি বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার বালিয়াদিঘি গ্রামের মৃত তোরাব আলীর মেয়ে।
মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় কালার ম্যাচ বিডি লিমিটেড নামে ওই কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধসহ মোট ৩৯ জন আহত হন। তাদের মধ্যে ২০ জন নারী শ্রমিককে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে আসা হলে ওইদিন মধ্যরাতে আঁখি (১৩) নামে এক শিশু শ্রমিক মারা যায়। বর্তমানে হাসপাতালে আরও ১৮ জন নারী শ্রমিক চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাকিদের এনাম মেডিকেলসহ স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৬
এজেডএস/ওএইচ/এএসআর
** মায়ের সঙ্গে শেষ কথা বলেই মারা গেলেন রোকসানা
** মায়ের প্রতীক্ষায় কাতরাচ্ছেন আশুলিয়ায় দগ্ধ রোকসানা