ঢাকা: মায়ানমারে চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘পদ্মা’য় ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফিংকালে বিদ্যমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে এ সহায়তা কামনা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
এর আগে মন্ত্রী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, মায়ানমারে চলমান বর্বর নির্যাতন থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা কিছু রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।
ব্রিফিংয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপের সকল দেশ, ভারত, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মিশর, সৌদি আরব, ইরানসহ ঢাকায় অবস্থানরত প্রায় সব দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার অথবা দূতাবাসের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাসহ আর্ন্তজাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে ইতিমধ্যে তিন লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এই মুহূর্তে আরও রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া দেশের আর্থ-সামাজিক খাতের জন্য বিরাট চাপ মনে করে বাংলাদেশ।
এছাড়া নিরাপত্তাজনিত শঙ্কাও রয়েছে। তাই যে কোনো মূল্যে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর নজরদারি করছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি।
তবে এ সমস্যা যেহেতু মায়ানমারের সৃষ্ট। তাই তাদেরই এর সমাধান করতে হবে বলে মনে করে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে এ সমস্যা সমাধানের জন্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী।
বৈঠকের পরপরই সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়েছে।
গত ৯ অক্টোবর সীমান্ত চৌকিতে সমন্বিত হামলা চালিয়ে মিয়ানমারের নয়জন বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও পাঁচজন সেনা সদস্য নিহত হওয়ার জের ধরে দেশটির সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে অভিযান শুরু করেছে।
ওই ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশ স্বপ্রণোদিত হয়ে মায়ানমারকে সহযোগিতা দিয়ে আসছে বলে ব্রিফিংয়ে কূটনীতিকদের জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রী।
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মাহমুদ আলী। তিনি বলেন, আশা করছি-পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নেওয়া মায়ানমারের নাগরিক শিগগির তাদের মাতৃভূমিতে কোনো ভয়ভীতি ছাড়াই ফেরত যাবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বৈঠকে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ওয়াটকিন মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের ক্রমবর্ধমান খারাপ পরিস্থিতির বিষয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংখ্যালঘু মুসলিমদের সহায়তা দরকার বলে মনে করেন বৈঠকে উপস্থিতরা। চাইলে মায়ানমারকে সহযোগিতা দেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
একই সঙ্গে রাখাইন প্রদেশে নিরাপত্তা, সেখানকার মানুষের জীবনমান বৃদ্ধি ও সমন্বয়ের জন্য বাংলাদেশ মায়ানমারের সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে আগ্রহী।
আর এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানান মন্ত্রী।
ব্রিফিং শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, কূটনীতিকদের কাছে বাংলাদেশ কীভাবে মায়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে সে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের জানানো হয়েছে- সেখানকার বর্তমান যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানযোগ্য।
এ সময়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের প্রস্তাবকে সমর্থন করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, মায়ানমার এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে এসেছে। ফলে দু’টি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে যে ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে তা অবশ্যই সমাধান সম্ভব। শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানই হলো একমাত্র পথ।
দেশটির গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সূচির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুইবার সাক্ষাতের কথা স্মরণ করে মাহমুদ আলী বলেন, তার দল (এনএলডি) ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে পররাষ্ট্র সচিবকে পাঠানো হয়েছিলো। আমার সঙ্গেও লাওসে বৈঠক হয়েছে।
‘আমরা মনে করি-মায়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক রয়েছে তা সু-প্রতিবেশী সূলভ। দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক যে সম্পর্ক রয়েছে সেগুলোকে কিভাবে আরও জোরদার করা যায়, সে প্রচেষ্টাও আমরা শুরু করেছি। ’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সীমান্তে যৌথ পরিদর্শন, যৌথ সীমান্ত ব্যবস্থাপনাসহ নিরাপত্তা নিয়ে সহযোগিতা ও আলোচনার কথাও মায়ানমারকে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৬/১৯৫৮ ঘণ্টা, আপডেট: ২১২১ ঘণ্টা
জেপি/এমএ