ঢাকা: ‘আব্বার চিকিৎসা প্রায় শেষ, বাড়ি ফেরার সময় হয়ে আসছে। কিন্তু বাড়ি ফিরতে ভয় লাগছে।
বৃহস্পতিবার ( ২৪ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) বাবার বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত হামলায় দু’পা হারানো শাহানুর বিশ্বাসের মেয়ে শারমিন আক্তার।
অশ্রুসিক্ত নয়নে শারমিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের দুই বোনের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। আমার বড় একটি ভাই নাই, বাবার আয়েই সংসার চলে। আমাদের দেখার কেউ নেই, আমরা বড় অসহায়। আমি আমার পরিবারের নিরাপত্তা চাই, বাবার ওপর হামলাকারীদের বিচার চাই’।
অসহায় বর্গাচাষি শাহানুর বিশ্বাসের বাড়ি ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার নলভাঙা গ্রামে। দুই মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় গত ১৬ অক্টোবর শাহানুরের ওপর হামলা চালান বখাটে ও এলাকার প্রভাবশালীরা।
শারমিন বলেন, ‘বাবা ( শাহানুর) বাড়ি ফেরার পথে তার ওপর হামলা চালানো হয়। ইউপি মেম্বার কামাল হোসেন, সাবেক মেম্বার মাহবুবের ছেলে আজম, হাসান, মোতালেব, বিল্লাল, জাহিদ, ইমদাদুল ও দুখু লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে দুই পা ভেঙে দেন। গুরুতর আহত অবস্থায় বাবাকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়’।
পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য শাহানুরকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তার দুই পা কেটে ফেলেন। বর্তমান তিনি হাসপাতালের বি ওয়ার্ডের ৬১নং বেডে চিকিৎসাধীন।
শারমিনের অভিযোগ, ঘটনার ২০ দিন পর্যন্ত মামলা নেয়নি পুলিশ। গত ০৪ নভেম্বর এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর পুলিশ তার চাচা সামাউল বিশ্বাসকে থানায় ডেকে নিয়ে যায়। এরপর চাচা বাদী হয়ে একটি নিয়মিত মামলা করেন।
আজম ও তার দলবল পরিবারকে এখনও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন অভিযোগ করে শারমিন বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবার গ্রামের বাড়িতে গেলে তারা আমাদেরকেসহ ঘর-বাড়িতে আগুন দেবেন। আমাকে ও আমার ছোট বোন শাহানাজ খাতুনকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছেন’।
২০১২ সালে যশোর সরকারি মহিলা কলেজে বাংলা বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন শারমিন। পরের বছর ২০১৩ সাল থেকে কলেজে আসা-যাওয়ার পথে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতেন মাহবুব মেম্বারের ছেলে আজম ও তার সঙ্গীরা। শাহানাজকেও স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে উত্ত্যক্ত করেন ওই বখাটেরা। শাহানাজ স্থানীয় নলভাঙা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী। শারমিনের সবচেয়ে ছোট ভাই মহিনুর রহমান।
দেশের প্রশাসনের ও সরকারের কাছে শারমিনের দাবি, ‘আমরা নিরাপত্তা চাই। নিরাপদে লেখাপড়া করতে ও নিজ বাড়িতে ফিরতে চাই’। তার বাবার ওপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানান শারমিন।
শারমিনের মা আরজিনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা বড় অসহায়। সংসার চালানো বা আমাদের দেখার মতো আর কেউ নাই। যারা আমার স্বামীর ওপর হামলা চালিয়েছেন, আপনারা তাদের শাস্তি দিন। আপনাদের কাছে বিচার চাই। ছেলে-মেয়ে নিয়ে নিরাপদে থাকতে চাই’।
এ সংক্রান্ত সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর হাইকোর্ট ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের কারাবন্দি (গ্রেফতার) করার নির্দেশ দেন। এরপর বুধবার (২৩ নভেম্বর) সকালে ১৩ আসামি ঝিনাইদহ আমলি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। পাশাপাশি পুলিশও এক আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।
তবে জামিনে থাকা আজম ও তার দলবল মামলা প্রত্যাহরে তাদেরকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ পরিবারটির।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৬
আরএটি/এএসআর