ঢাকা: ‘‘মাটি কাইটা সংসার চালাইতাম, ভিটামাটি ছাড়া কিছুই ছিল না, ওগো দুই বোনের বাবার মৃত্যুর পরে সংসারে করুণ দশা হয়। মাটি কাইটা সংসার চালাইয়া ওগো বড় করি।
আশুলিয়ায় অগ্নিদগ্ধ দুই বোন লাভলী আক্তার (১৭) ও ফাতেমা আক্তার (১৫) ঢামেকের বার্ণ ইউনিটের (আইসিইউ) ভর্তি। তাদের মা ফজিলা বেগম এভাবেই কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন এসব কথা।
তিনি বলেন, "ভাইগো, আমার মেয়েগো আর ঢাকায় রাখুম না। ডাক্তার ছুটি দিলেই বাড়ি নিয়া যামু। মার সুখের জন্য ঢাকায় চাকরি করতে আইসা নিজেরাই এখন আগুনে পুইড়া যন্ত্রনায় কাতরাইতাছে দুই বোন। আমি মা হইয়া এইটা বইসা বইসা দেখতাছি। কিছুই করতে পারতাছি না, এইটা যে কত কষ্টের তোমাগো তা বুঝানো যাইবো না। ’’ ---এই বলে কাপড় দিয়ে চোখ মুচতে থাকেন তিনি।
দগ্ধ লাভলী ও ফাতেমা মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার মৃত মোঃ বাবর আলীর সন্তান। তাদের মা ফজিলা বেগম জানান, তার চার মেয়ে। বড় মেয়ে বিলকিছ আক্তার স্বামীসহ আশুলিয়ায় থাকেন। চার থেকে পাঁচ মাস আগে দুই বোন লাভলী ও ফাতেমা কাজের সন্ধানে আশুলিয়ায় বড় বোনের বাসায় আসে। এক মাস হয় তারা আশুলিয়ার ঐ কারখানায় চাকুরি নেয় মাসে সারে চার হাজার টাকা বেতনে।
কথা গুলো বলতে বলতে মা ফজিলা বেগম হঠাৎ চুপ হয়ে যান। তারপর আবার বলতে থাকেন, ‘‘ওরা চাকরি পাওয়ার পর আমারে বলে, মা আমরা চাকরি পাইছি, তোমারে আর কষ্ট করতে দিমু না, তুমি আমাগো লাইগা অনেক কষ্ট করছো। ’’
হঠাৎ চিৎকার করে ফজিলা বেগম বলতে থাকেন, ‘‘হে আল্লাহ, এখন যে কষ্ট দিলা এই কষ্ট আমি সামলামো কেমনে। আমার দুই মেয়ে পুরা যন্ত্রনায় দাপাইতাছে, আমার তো আর সহ্য হইতাছে না। ’’
শ্বাসনালীসহ লাভলীর শরীরের ৩০ ভাগ ও ফাতেমার ২০ ভাগ পুড়ে গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৫১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৬
জেএম/