বগুড়া: অগ্রণী ব্যাংক বগুড়া থানা রোড শাখা ব্যবস্থাপক আব্দুস সামাদ। একাই একশ’ তিনি।
একইভাবে নভেম্বরে মেসার্স মদিনা ট্রেডিংয়ের অনুকূলে এলসি ঋণ অনুমোদন দেন ১ কোটি টাকা। সিসি ঋণ দেন ২০ লাখ টাকা।
এর মধ্যে মেসার্স রাকিব এন্টারপ্রাইজের নামে দেওয়া এলসি ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হয় ৩১ মে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠান ঋণ নবায়নে ব্যর্থ হয়। এরপরও ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন করে ৫কোটি টাকার এলসি ঋণ-প্রস্তাব পাঠানো হয়। ২৩ জুলাই সেই ঋণ প্রস্তাব ফেরত আসে।
এখানেই ক্ষান্ত হননি এই ব্যবস্থাপক। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ৫৪লাখ টাকার তিনটি এলসি ঋণ খুলে দেন। পুরো প্রক্রিয়ায় এই ব্যবস্থাপক গুরুতর অনিয়মের আশ্রয় নেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
পাশাপাশি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গোপন রেখে দায়ী ব্যবস্থাপকের পদোন্নতির জন্য উক্ত ঋণ হিসাব পুনঃতফসিল করার উদ্যোগ নিয়েছে। যা আরো একটি গুরুতর অনিয়ম।
অগ্রণী ব্যাংক থানা রোড শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুস সামাদের বিরুদ্ধে ওঠা নানামুখি অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানকালে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য ওঠে আসে।
এদিকে ঋণগ্রহীতার লিমিট/পিএডি দায় নিয়মিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের নতুন করে এলসি না খোলার নির্দেশ প্রদান করে তদন্ত প্রতিবেদন দেন এসব অনিয়ম তদন্তে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্তদল। প্রতিবেদনে নির্দেশনা উপেক্ষা করার কথা বলা হয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অডিট অ্যান্ড ইন্সপেকশন ডিভিশন-২ এর সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. রুহুল আমীন চৌধুরীকে প্রধান করে এই তদন্ত দল গঠন করা হয়। সদস্য ছিলেন অডিট অ্যান্ড ইন্সপেকশন ডিভিশন-১ এর প্রিন্সিপাল অফিসার মুহাম্মদ জাকির হোসেন।
সেই প্রতিবেদনে অনিয়মের বিরবণে বলা হয়েছে, অর্পিত ক্ষমতা ২০০২ এর নির্দেশনা অমান্য করে এসপিও/ব্যবস্থাপকের অনুমোদনক্রমে গ্রাহকের এলসি লিমিট মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও সর্বমোট ৬৯.০২লাখ টাকা মূল্যের তিনটি ঋণপত্র স্থাপন করা হয়েছে।
মঞ্জুরীপত্রের শর্তানুযায়ী এলসি ইস্যুকালে গ্রাহকের নিকট থেকে ২৫% মার্জিন নেওয়ার কথা থাকলেও প্রায় ক্ষেত্রেই ২১% বা ২২% মার্জিনে এলসি খোলা হয়েছে। যা মঞ্জুরীপত্রের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লংঘন।
এছাড়াও প্রতিবেদনে আরো তিনটি অনিয়মের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।
বুধবার (২৩নভেম্বর) পৌনে ১২টার ঘটনা। এসময় শাখা ব্যবস্থাপক পদোন্নতির জন্য ঢাকায় পরীক্ষার জন্য অবস্থান করছিলেন।
শাখার ঋণ বিভাগের সিনিয়র অফিসার (এসও) হেদায়েতুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘এই ঋণ অনুমোদনে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। সবকিছুই ব্যবস্থাপকের পরামর্শে করা হয়েছে। এখান থেকে কেবল প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ’
এক পর্যায়ে হেদায়েতুল ইসলাম কিছু তথ্য দিতে রাজি হন। কিন্তু বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ব্যবস্থাপক আব্দুস সামাদ হেদায়েতুল ইসলামকে ফোন করে তথ্য দিতে নিষেধ করে দেন। এরপর হেদায়েতুল ইসলাম তথ্য দিতে অস্বীকার করেন।
এরপর সেই ফোনেই ব্যবস্থাপক আব্দুস সামাদ এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে বলেন, ‘সবকিছু নিয়মের মধ্যে থেকেই করা হয়েছে। ঋণ বিতরণে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। আর যদি কিছু হয়েও থাকে সেটা কর্তৃপক্ষ দেখবে। আপনি (প্রতিবেদক) দেখার কে?’
অগ্রণী ব্যাংকের আঞ্চলিক কার্যালয় বগুড়া উত্তর জোনের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আবুল হাসেম বাংলানিউজকে বলেন, ‘অনিয়ম করে ঋণ অনুমোদন দেওয়ায় সেপ্টম্বর মাসে শাখা ব্যবস্থাপকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়। ’
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে অনিয়ম তদন্তের জন্য উচ্চ পর্যায়ের তদন্তদল আসে। তদন্তদল এই দুই প্রতিষ্ঠানে ঋণ বিতরণে ব্যবস্থাপকের নানা অনিয়ম দেখতে পায়। তবে ঋণ আদায়ের স্বার্থে তা পুনঃতফসিলি করণের চেষ্টা চলছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
তদন্তে অনিয়মের বিষয়টি প্রমাণ হওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো না কেন জানতে চাওয়া হলে জবাব এড়িয়ে যান ডিজিএম আবুল হাসেম।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) দুপুর ২টায় বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়া কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. হাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৬
জেএম/