জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: প্রতি বছর পরিযায়ী পাখিদের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। একটু আগেভাগেই প্রকৃতির প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় এখানে।
ক্যাম্পাসে ছোট-বড় ১০ থেকে ১২টি লেক রয়েছে। এগুলোর মধ্যে চারটি লেকে অতিথি পাখি বেশি বসে। এবারও প্রশাসনিক ভবনের সামনের লেক, জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হল সংলগ্ন লেক, বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশে ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের লেক এবং সুইমিং পুল সংলগ্ন সবচেয়ে বড় লেকে এরই মধ্যে পাখিরা আসতে শুরু করেছে। এই লেকগুলোকে অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে এবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আরও কয়েকটি লেক পরিষ্কার করেছে।
প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের দিকে হিমালয়ের উত্তরে প্রচণ্ড শীত নামতে শুরু করে। ফলে উত্তরের শীতপ্রধান অঞ্চল সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, জিনজিয়াংসহ চীনের নানা শীতার্ত এলাকা, নেপাল ও ভারতে প্রচুর তুষারপাত হয়। তুষারপাতের ধকল সইতে না পেরে পাখিরা উষ্ণতার খোঁজে পাড়ি জমায় বিভিন্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। এ সময় হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি দক্ষিণ এশিয়ার নাতিশীতোষ্ণ দেশ বাংলাদেশে আসে। বাংলাদেশের যেসব এলাকায় এসব পাখি আসে সেসবের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম।
অক্টোবরের শেষে ও নভেম্বরের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলো ভরতে থাকে পাখিতে। ফেব্রুয়ারির শেষ ও মার্চের প্রথম দিকে আবার ফিরে যায় তারা।
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক পাখি লোকগুলোতে আসে সাইবেরিয়া থেকে।
বর্তমানে লেকগুলোতে যেসব পাখি দেখা যাচ্ছে সেগুলো এসেছে নেপাল ও ভারতের হিমালয় ও বাংলাদেশের হাওর অঞ্চল থেকে।
বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের জরিপে দেখা যায়, ১৯৮৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম পরিযায়ী পাখি আসে। এ সময় ৯০ প্রজাতির অতিথি পাখি দেখা যায় এ ক্যাম্পাসে। বর্তমানে ১৯৫ প্রজাতির পাখি দেখা যায়। যেসবের মধ্যে ১২৬টি প্রজাতি দেশীয় এবং ৬৯টি পরিযায়ী।
দুই ধরনের পাখির আগমন এ ক্যাম্পাসে। এক ধরনের পাখি ডাঙায় বা শুকনো স্থানে বা ডালে বসে বিশ্রাম নেয়। আরেক ধরনের পাখি পানিতে থাকে ও বিশ্রাম নেয়। এদের বেশির ভাগই হাঁস জাতীয়।
এ ক্যাম্পাসে যে সব পাখি আসে সেসবের মধ্যে ৯৮ শতাংশ ছোট সরালি। আর বাকি ২ শতাংশ অন্য প্রজাতির পাখি। এদের মধ্যে রয়েছে, বড় সরালি, ল্যাঞ্জা হাঁস, খুন্তে হাঁস, ভূতি হাঁস ও ঝুঁটি হাঁস ইত্যাদি।
প্রতিবারের মতো এবারও পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘পাখ-পাখালি দেশের রতœ, আসুন সবাই করি যতœ ‘ স্লোগানে আগামী ৬ জানুয়ারি আয়োজন করা হয়েছে পাখিমেলা-২০১৭। ২০০১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে এ পাখিমেলার আয়োজন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগ ও ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার।
এবারের পাখিমেলায় দিনব্যাপী আয়োজনের মধ্যে থাকছে, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি দেখা প্রতিযোগিতা, পাখির আলোকচিত্র ও পত্র-পত্রিকা প্রদর্শনী, শিশু-কিশোরদের জন্য পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, টেলিস্কোপে শিশু-কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ, অডিও-ভিডিও'র মাধ্যমে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি দেখা প্রতিযোগিতা, পাখি বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা শেষে পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পাখিমেলার আহ্বায়ক মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের এরিয়া ছোট হলেও দিন দিন পাখির সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় লেকটি (সুইমিংপুল সংলগ্ন লেক) লিজমুক্ত রাখা গেলে অতিথি পাখিদের বসার জন্য তা সব থেকে ভালো হবে। পাখি যেখানে নিরাপদ বোধ করবে সেখানেই বসবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি পাখি ও বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটু দৃষ্টি দেন, তাহলে হয়তো জাহাঙ্গীরনগরের ঐতিহ্য আমরা ধরে রাখতে পারবো। ‘
বিশ^বিদ্যালয় রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা লেকগুলো কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে দিয়েছি। পাখিরা যাতে বিরক্ত না হয় বা উড়ে না যায় সেজন্য লেকগুলোর পাশে গাড়ির হর্ন, বাঁশি বাজানো, মিছিল করা ইত্যাদি কাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নির্দেশিকা লিখে ব্যানার ও ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। ‘
বাংলাদেশ সময়:...ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৬
এএ/জেএম